চোদ্দো পিদিম
দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত
আমি বাপু ওসব পারবনা !
– কী ?
– ওই প্রদীপ-টদীপ ধরাতে ।
– এরকম বোলো না । প্রতিবছর তো যাওয়াও হয়না । বাড়িটা পড়ে আছে । ভাগ্যিস পিসি পিসেমশাই থাকেন। বছরে একবার অন্তত ভিটেতে গিয়ে চোদ্দো পিদিম দেখাবেনা মৌ ?
মৌ ঝাঁকুনি দিয়ে ঘাড় নাড়তে নাড়তে বললো,
– না, না পারবনা। যতসব পুরুষতান্ত্রিক ব্যাপারস্যাপার । চোদ্দো পুরুষকে প্রদীপ দেখাও । কেনো মেয়েরা কি দোষ করল ?
– আহা রেগে যাচ্ছ কেন? জাস্ট চোদ্দোটা মোমবাতি বাড়ির ছাদে জেলে দেবে । তুমি কিন্তু দিন-দিন ফেমিনিস্ট হয়ে যাচ্ছ মৌ !
– পূর্বতন ঊর্ধ্বপুরুষের নিকুচি করেছে ।
মৌ নিজের মাথা দুহাতে চেপে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো
– আচ্ছা মহর্ষি, ভেবে বল তো, যারা মারা গেছেন তারা আল্টিমেট কোন কাজে আসেন !
আমরা শুধু তাদের স্মৃতি রোমন্থন করেই যাব, প্রদীপ জ্বালব, হ্যান করব, ত্যান করব, ডিসগাস্টিং !
– বুঝেছি মৌ, রাগ হয়েছে আমার উপর । হ্যালোউইন পার্টি করবে বলেছিলে, বাধা দিয়েছি তাই তো ?
মৌ চুপ করে রইলো
মহর্ষি সিগারেট ধরিয়ে বলল,
– বেশ তো ! তুমি পার্থ, শিল্পী, ইন্দ্রাণী, সব্যসাচী এদেরকে কালীপুজোয় নেমন্তন্ন করো ভিটের বাড়িতে । বাজি পোড়াব, হইচই হবে । মজাদার রিউনিয়নও হয়ে যাবে ।
– এতো লোকের বাজারঘাট কে করবে মহর্ষি ? তোমার পিসেমশায়ের বয়েস হয়েছে । আমি রিকোয়েস্ট করতে পারবনা ।
– সে চিন্তা কোরোনা ।
সিগারেট ফেলে দিয়ে মহর্ষি বললো
– সকালে তুমি ট্রেন ধরে চলে যাও, মালতীদিকে সঙ্গে নিয়ে । বাড়ি পরিষ্কারে হেল্প করবে । আমি বরং একেবারে বাজার-টাজার করে মাছ-মাংস কিনে রাতে ফিরব ।
– অত রাতে একা গাড়ি চালিয়ে আসবে ?
– না না । রাস্তাটা আমি ঠিকঠাক চিনিনা, ইউনিস ড্রাইভ করবে ।
মৌ হেসে বললো,
– কয়েকটা বড় কুমড়ো এনো তো !
– কুমড়ো ????
– আরে নাক কান কেটে হ্যালোউইনের
জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন বানাবো । জানো ইউরোপ জুড়ে হ্যালোউইন ফেস্টিভ্যাল চলছে । কি দারুন না গো !
মহর্ষি গজগজ করতে করতে বললো
– কাকের পিছনে ময়ূরের পালক গুঁজলেও সে ময়ূর হয়না , বুঝলে ?
– মানে ?
– যতই হ্যালোউইন করে চেঁচাও, তুমি কিন্ত বাঙালিনী হয়েই থাকবে । আমাদের শিরায় শিরায় বইছে বাঙালী রক্ত । অস্বীকার করতে পারবে নিজের শিকড় ?
মৌ মুখ ভেঁচকে সোফা থেকে উঠে গেল।তবে প্ল্যানটা জব্বর করেছে মহর্ষি । কালীপূজায় শ্বশুরবাড়ির ভিটেতে বন্ধুদের নিয়ে রিইউনিয়নের প্ল্যানটা বেজায় জমবে ।
বড়ো বড়ো ব্যাগে বাজার করে ডিকিতে চাপিয়ে রওনা হতে হতেই সন্ধে হয়ে গেলো মহর্ষির । অফিস থেকে বেরোতে দেরি হয়ে গেছে । ভাগ্য ভালো জোড়া ইলিশটা পেয়ে গেছে বাজার থেকে কম দামে । এছাড়াও চিতলের পেটি আর গলদা চিংড়ি কিনেছে । মালাইকারি যা জমবে এবার, ভাবতেই মহর্ষির জিভে জল এলো ।
হাওড়া ব্রীজের জ্যাম পেরোতেই খলিফার মত স্পিডে গাড়ি চালালো ইউনিস । ঘন্টা দুয়েক মধ্যেই চলে এলো অনেকটা দূর । রাস্তা আজ ফাঁকা । ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত দুয়েকটা গাড়ি এতক্ষণ দেখা যাচ্ছিল, এখন তাও নেই ।
মহর্ষি অবাক হয়ে বলল,
এত বছর ধরে আসছি, এমন শুনশান তো দেখিনি ইউনিস। রাস্তাটা ভুল করলে না তো ?
ইউনিস ভুরু কুঁচকে বলল
আমিও এতক্ষণ ধরে সেটাই ভাবছি স্যার । একই জায়গায় ঘুরপাক খেয়ে চলেছি আমরা । তালগাছটা খেয়াল করেছেন স্যার ?
মহর্ষি জানলার কাঁচ নামিয়ে বলল,
কই তালগাছ ? কোথায় ? ইউনিস ?
ইউনিস কোনো উত্তর দিলনা, গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল।
মিনিট পাঁচেক পর মহর্ষি খেয়াল করল, সেই তালগাছটাই ফিরে এসেছে । ইউনিসের কাঁধ ধরে ঝাঁকাতেই ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে গাড়ি থামল ।
মহর্ষি হুমড়ি খেয়ে সামনে পড়তে পড়তে টাল সামলাল। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় মহর্ষি দেখতে পেল, পায়ে পায়ে গাছটার দিকে এগিয়ে চলেছে ইউনিস । সেই তালগাছটা ।
এরপর বিস্ফারিত দৃষ্টিতে মহর্ষি যা দেখলো, অবিশ্বাস্য !
“ঘাউল ! ঘাউল !”, বলে বিকট চিৎকার করে মাথা চেপে দৌড়ে চলে গেল ইউনিস । তারপর অন্ধকারে হারিয়ে গেল । ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেল মহর্ষি । ইউনিস কেনো এমন চিৎকার করে ছুটে গেল? কোথাই বা গেল ? অন্ধকারে ইউনিসকে খুজতে যাওয়াও ঝুঁকি । সাপখোপ থাকতে পারে ।
– ইউনিস ? ইউনিস ?
বারকতক ডেকেও সাড়া পেলো না মহর্ষি । রাত সাড়ে এগারোটা, হাতঘড়িতে দেখলো মহর্ষি । ড্রাইভিং করতে তার বরাবরই ভালো লাগে । রাস্তাঘাট চেনেনা বলেই ইউনিসকে ডেকে নিয়েছিল মহর্ষি । তাছাড়া রাস্তার হালও ভাল নয় । গ্রামের রাস্তা । খানাখন্দ, গর্তে ভরা । ইউনিস কিসে এত ভয় পেল, বুঝে উঠতে পারলনা মহর্ষি ।
সে গাড়িটা নিজেই স্টার্ট দিল । হেডলাইটের আলোয় মহর্ষি দেখতে পেল একজন বৃদ্ধ হেঁটে আসছেন লাঠি হাতে। পিছনে কয়েকজন । মহিলা বলেই মনে হচ্ছে ।
দাদু, রাস্তাটা চিনতে পারছিনা । একটু বলে দেবেন ?
বৃদ্ধর হাতে ছোটো লন্ঠন । নামিয়ে রেখে বললেন ,
কোথায় যাবে ?
ভুবন গ্রাম ।
বৃদ্ধ থমকে দাঁড়ালেন
বাহ ! বেশ । তা আমরাও ভুবন গেরামেই যাবো । বেরোতে দেরি হয়ে গেল ।
মহর্ষি অবাক হয়ে বললো
এত রাতে আপনারা কিসে যাবেন ?
বৃদ্ধ বললেন,
কেষ্ট বাগদির ভ্যান নিয়ে আসার কথা আছে । দেখি কখন আসে । চলো তোমাকে রাস্তাটা দেখিয়ে
দিই।
চিনতে পারবেন ?
ওবাবা, চিনবনা ? ভুবন গাঁ ই তো আমার বাড়ি ।
বৃদ্ধ মাথা ঝুঁকিয়ে গোপন কিছু বলার ঢঙে ফিসফিস করে বললেন
এ জায়গাটা ভাল না । কেটে পড়ো শিগগিরি । ভালো কথা, তালগাছটার দিকে মোটেও তাকিও না যেনো
মহর্ষি বললো
রাস্তাটা চিনিয়ে দিলে আপনাদেরও নিয়ে যেতে পারি । কজন আছেন দাদু ?
বৃদ্ধ লন্ঠন উচু করে বললেন
তা আছি কজন । যদি হও সুজন, তেঁতুলপাতায় নজন ।
মহর্ষি থ্যাংক ইউ বলতেই বৃদ্ধ হেসে বললেন
ওসব থ্যাঙ্কু ম্যাঙ্কু দিতে হবে না । দু’পাতা ইংরেজি পরই তোমরা নিজেদেরকে সাহেব ভাবো ।
কথা না বাড়িয়ে সবাইকে গাড়িতে তুলে নিলো মহর্ষি । বড়ো সেডান গাড়ির পিছনটায় শেষপর্যন্ত কজন যে বসলো, অন্ধকারে ঠাহরই করতে পারলনা মহর্ষি । বৃদ্ধ বসলেন গাড়ির সামনে । মহর্ষির পাশে । ক্লাচ এবং স্টিয়ারিং ধরেই মহর্ষি বুঝল যে গাড়ি দিব্যি ছুটছে । কিন্তু ইউনিসকে এভাবে ফেলে যেতে মনটা খচ খচ করতে লাগলো তার ।
বৃদ্ধ যেন অন্তর্যামী । বলে উঠলেন
– মনে হচ্ছে ওকে পেঁচোয় ধরেছে । তোমার ড্রাইভার ।
– পেঁচো ?
বৃদ্ধ নিজের পৈতেটা ছুঁয়ে বললেন
– তুমি কেমন ছোকরা হে ! বারবার নাম করছো ! যে গেছে যাক । ভাবতে হবে না । কাল দেখা যাবে ।
বৃদ্ধ হাত তুললেন ।
ঝড়ের বেগে গাড়ি চালালো মহর্ষি । স্পীড তুললো ১২০ ।
বৃদ্ধ বললেন
আশেপাশে কিচ্ছু দেখো না । অমাবস্যার রাত্তিরে বেরিয়ে মোটেই ভালো কাজ করোনি ছোকরা । বাড়িতে কে কে আছে ?
মহর্ষির খুব রাগ হল । বুড়োটা গাড়িতে উঠেই জ্ঞান দিতে শুরু করেছে । এই এদের দোষ । বয়স হলেই বক বক বক । সাঁ সাঁ করে গাড়ি চালাতে চালাতে মহর্ষির চোখে পড়লো, রাস্তার মাঝখানে একটা বাঁশ পড়ে আছে । সে ব্রেক কষতেই বৃদ্ধ বলে উঠলেন
দাঁড়ালে কেন ? সোজা ওর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দাও ।
মহর্ষি দেখল দুধারে ঘন বাঁশবাগান । জোনাকিগুলো মিটমিট জ্বলছে । বলা যায়না , কেউ হয়তো বাঁশ ফেলে প্যাঁচে ফেলতে চাইছে । চোর-ছ্যাঁচ্চোরের তো অভাব নেই দেশে ।
বৃদ্ধ বললেন ,
ডানহাতের শাপলার বিল পেরিয়েই বড় সড়কে উঠে পরবে । কোনদিকে তাকাবে না । নয়ানজুলির দিকে একঝলক তাকিয়ে দেখল মহর্ষি । কয়েকটা আলো দপদপ করে জ্বলছে ।
বৃদ্ধ মৃদু হেসে বললেন
অতসী ! আলেয়া !
মহর্ষি বলল,
ওটা কিচ্ছু না । ফসফরাস ডাইহাইড্রাইড ।
হাসতে হাসতেই উইন্ডমিরররে চোখ পড়ল মহর্ষির । আলেয়া যে ভূত নয়, তা সে বলে দিয়েছে । ওটা তো মিথেন গ্যাস । হঠাৎ চমকে উঠলো মহর্ষি । উইন্ডমিরররে কিসের ছায়া ? পিছনে বসে থাকা যাত্রীদের একজনের গলা থেকে ধড় অবধি, মুন্ডু নেই ! ভয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল মহর্ষি ।
বৃদ্ধ হা হা করে উঠলেন
– গাড়ি মোটেও থামিও না হয়ে ছোকরা ।
কিন্তু মহর্ষি থর থর করে কাঁপছে । গেট খোলার আওয়াজ পেয়ে মুখ ঘোরাল
বৃদ্ধ বললেন
দাঁড়াও । আমাদের একজন নেমে যাবে । তুমি বুঝি ওকে দেখে ভয় পেলে ? আরে ধুর, ধুর ! ও তো জাদুর খেলা দেখায় । কালীপুজোয় বায়না আছে তাই অভ্যেস করছে ।
দরদর করে ঘামতে ঘামতে মহর্ষি এবার দেখল গাড়ির ডিকি খোলা আর তার পরের দৃশ্য দেখে মহর্ষির বুক কেঁপে উঠল । ইলিশ মাছ দুটো শূন্যে ভাসতে ভাসতে চলে যাচ্ছে । এটাও কি জাদুর ভেলকি ? ভয়ে গোঁ গোঁ করতে করতে মহর্ষি বুক চেপে ধরলো স্টিয়ারিংয়ে । অ্যাক্সিলেটরে পা লেগে গিয়ে গাড়ি ছুটছে হওয়ার বেগে । দুধারে নির্জন ধানক্ষেত । হেমন্তের রাতে কালো কালো মাথা নিয়ে জেগে আছে আশশেওড়া, বেল, নিম, অশ্বত্থ । একটা বড়সড় পেঁচা তার গাড়ির সামনে ।
বৃদ্ধ পিছন ফিরে কাকে যেন বকাবকি করছে শুনতে পেলো মহর্ষি । লাল পাড়, সাদা শাড়ি পড়া মহিলার শাঁখা পলা পরা হাত দুটো দেখতে পেল সে ।
তোমার বাড়িতে পৌঁছতে পারলেই তো হল ? ব্যাস । মেলা ঘ্যান ঘ্যান কোরো না তো মেয়ে !
হঠাৎ মহর্ষি দেখল গাড়ির খোলা জানলা দিয়ে লাল পার সাদা শাড়ি পড়া মহিলা উড়ে বেরিয়ে গেল। একটা খিলখিল হাসির রোল উঠল হাওয়ায় । হেমন্তের রাতে মাথাটা ঘুরে উঠল মহর্ষির । অবশেষে নিজের গ্রামের বাড়িটাকে চিনতে পারল মহর্ষি । ভয়ে বুক শুকিয়ে খটখট করছে । হাত পায়ের আঙ্গুলে সাড় নেই । মাথা টলমল । এখনি না হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় । গাড়িটা থামাতে পারছিল না সে । হাতপায়ের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই ।
বৃদ্ধ ভদ্রলোকই ব্রেকে পা চেপে গাড়ি দাঁড় করালেন।
আসি ভাই । অনেক উপকার করলে । বিশেষত আজকের রাতে । এই ব্রাহ্মণের আশীর্বাদ নাও ।
টলতে টলতে আছন্নের মত বাড়িতে ঢুকল মহর্ষি ।
পিসেমশাই বললেন
বাবা ! এত দেরি হল ? বৌমা তো খুব দুশ্চিন্তা করছে ।
মৌকে দেখে চমকে গেলো মহর্ষি । চব্বিশ ঘন্টা জিন্স, টি শার্ট পরা মৌ আজ সবুজ তাঁতের শাড়ি পরেছে । মনে হচ্ছে ধানি জমি । পুরনো বাড়িটার খিলান, কার্ণিশ, অলিন্দ জ্বলজ্বল করছে আলোয় । প্রদীপের মধ্যে ঘি দেওয়া আর এক টুকরো সলতে ।
পিসি ভাত বেড়ে দিতে দিতে বললেন
– ভূত চতুর্দশীর রাতে এতটা পথ এসে খুব একটা ভালো কাজ করিসনি বাবু । জানিসনা, আজ রাতে বাংলার মাঠে-ঘাটে তেনারা ঘুরে বেড়ান !
মহর্ষির চোখের সামনে ভেসে উঠল একজোড়া ইলিশ মাছ শূন্যে ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য । সে কিছু বলতে পারল না ।
পিসি বললেন
– একানড়ে বসে থাকে তালগাছে । তারপর ধর আছে শাকচুন্নি, শাঁখা পলা পরা ভূত । বেঁশোভুত জানিস না ? রাস্তায় বাঁশ ফেলে রাখে ? তাছাড়া আছে ঝেঁও পেত্নী, প্যাঁচাপেচি । মাছের লোভে আসে মামদো ভূত, মেছো ভূত । কানা ভুলো , স্কন্ধকাটা কম আছে নাকি ! নে এখন খেয়ে শুয়ে পড় । ভালোয় ভালোয় পৌঁছেছিস এই ঢের ।
খেয়ে ছাদে ওঠার ইচ্ছা ছিল না মহর্ষির । মৌ জোর করে নিয়ে এল । গা হাত পা এখনও ঠাণ্ডা । ইউনিসের কথা ভেবে মহর্ষির বুক শুকিয়ে যাচ্ছে ।
ছাদে চোদ্দো প্রদীপের সামনে দাড়িয়ে মৌ বলল,
– জানো ? আজ খাবার পর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । স্বপ্নে দেখলাম একটা কমবয়েসী মেয়ে । আমার জুনিয়রই হবে । এসে বলছে, “চোদ্দটা প্রদীপ নাকি শুধু চোদ্দোজন পুরুষদের জন্য নয়, মায়েরাও আছে । বাবা, মা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা, ঠাকুরদার বাবা, ঠাকুরদার মা যেমন আছেন, মায়ের দিকে দাদু, দিদিমা, দাদুর বাবা মা, আবার দাদুর দাদু দিদিমারাও আছে । মোট চোদ্দজোন ।” শুনেই বুঝলাম, ব্যাপারটা পুরুষতান্ত্রিক নয় । মায়েদেরও যথেষ্ট মর্যাদা দেওয়া হয়েছে । আমারই ভুল বুঝলে । সঙ্গে সঙ্গে উঠে প্রদীপ জ্বালালাম । ভালো করিনি ?
পিসি কখন ছাদে উঠেছে দেখতে পায়নি মহর্ষি । বলল,
বৌমাকে মায়ের শাড়িটা পড়তে দিলাম রে বাবু । কি সুন্দর লাগছে দেখতে বল ?
চিলেকোঠার ঘরে প্রদীপ দিতে দিতে পিসি বললেন
মহর্ষি ! একবার জোড়ায় প্রণাম করে যা । ঠাকুরদা ঠাকুমার ছবিটা আজ এখানে রেখেছি । তখন তো ক্যামেরা ছিল না । কতদিন আগের কথা । হাতে আঁকা ছবি । তাও কি চমৎকার কাজ ! দেখে যা ।
চিলেকোঠায় উঁকি দিয়ে থ মেরে গেল মহর্ষি । বিস্ময়ে মুখ দিয়ে কথা সরল না । এই তো ! এই তো সেই ভদ্রলোক ! বৃদ্ধ ভদ্রলোক যিনি গাড়িতে তার পাশে বসে রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে এলেন !
মৌ চেঁচিয়ে বলল,
পিসি ! এই আপনাদের ঠাকুমা ? মহর্ষির গ্রেট গ্র্যান্ডমাদার ? মাই গড ! আমি তো আজ এঁকেই স্বপ্ন দেখলাম !
মহর্ষির ভয় কেটে গেল মুহূর্তের মধ্যে । চোদ্দো পিদিমে ঘেরা ছাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে মনে হল আকাশ থেকে নেমে এসেছেন পূর্বজরা । অমাবস্যা কোথায় ? আলোয় আলো হয়ে উঠেছে সব । এই তো পুনর্মিলন! আগের মানুষদের সঙ্গে পরের মানুষদের ।
মহর্ষি ছবির বৃদ্ধর গায়ে পরম মমতায় হাত বোলাতে লাগল ।
দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত
দারুন।।
খুবই ভাল লেগেছে পড়ে… আরও লেখো Dolanchampa… আগ্রহ তৈরী হয়েই আছে… পড়তে চাই তোমার লেখা 👌❤️🌹