লক্ষ্মী যখন অলক্ষ্মী

কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়

পায়ের কাছে কাগজনৌকো ভাসছে অগাধ জলে

যেন ঢেউয়ের সঙ্গে ঢেউবাতাসে রাজহংসী চলে

কখন যেন চরের বালি পালকমাতার আগুন চায়

স্রোতের জলে ভগ্নজীবন আকাশ জানে প্রাণের দায়

মাঝনদীতে নোঙর বাঁধে ভরা ভাদর চাঁদজোছনা

এপার ওপার অন্তরীপে স্রোতের আগায় বৃষ্টিকণা




নকশাপাতা ডিঙার গায়ে মিছেই মিঠে জলের দাগ

ঘুমপাহাড়ি মাতন বাঁশির সুর উচাটন রঙীন ফাগ

তার ভিতরে লক্ষ্মীমন্ত মেয়ের চোখের হাপুশ জল

বিন্দু বিন্দু আলোর মতো স্ফটিক ফোঁটা কান্নাদল

বুকের ভিতর মৃতজীবন পুড়ছে ভূমি দাহন জ্বরে

কাঁপছে মাটি গিঁট বাঁধা মন অশ্রুকণা বেদাগ ঘরে




ও মেয়ে তুই কাঁদিস কেন শূন্যউদাস পাড়ের দোসর

 এক নদী বান তোর জন্যই এক আকাশী ভোর

শৈবলিনীর বুকের ভিতর রাজপ্রাসাদের মস্ত ছই

ও মেয়ে তুই জানিস তো সেই উড়োপাতার সুখের খই

লক্ষ্মী কন্যা সাতনরী হার তোর কাছে তো আছে

ঝাঁপির ভিতর সাত রেনু রঙ সেও তো তোরই কাছে




ওদিকপানে এক উড়নচরে লক্ষ্মীছাড়া নাম

পড়শীপাড়ার চোখের বালি সাত গাঁর বদনাম

সকালবেলার সূয্যি নিয়ে ঘোরে নিশীথ রাতে

বই পড়েনা বেতাল সুর উনুন ছাইতে মাতে

সংসারে সে বাড়তি বোঝা এক সুতলি দাম

এক ঢাল চুল কালো মেয়ের লক্ষ্মীছাড়া নাম




লক্ষ্মীমেয়ের রাজপুরীটা চাঁদের আলোয় ভাসে

চাঁদ শুকোলে ভোরের আকাশ রাঙা চাদর ধরে

লক্ষ্মীছাড়া এসব দেখে দু:খে আকুল হয়

ময়লাপানা উকুনমাথা খবিশ ধুলোর ঘর

অকাজ শুধু মেয়ের মনে নষ্টামি তার দাস

লক্ষ্মীছাড়ার ময়লা শাড়ি বাসি ফুলের স্বাদ




গুণবতী লক্ষ্মীমেয়ের পায়ের নীচে দুখ

শরীর জুড়ে চাঁপার গন্ধ এক শরতের সুখ

মেয়ের পায়ে আলতা খুশি পুণ্যিপথের বাঁকে

আকাশ জানে সবটুকু মেঘ জীয়ন কাঠির ঢাকে

লক্ষ্মীমেয়ের পায়ে বাজে সোনার মলের বোল

সেই বোলেরই শব্দে জাগে রাজপুত্রের ভোর




খারাপ মেয়ের ঘরভরা রাত একশ আঘাত মনে

একশ বিষাদ দ্রোহ হয়ে জাগে ঘরের কোণে

তিমিরবরণ কৃষ্ণপক্ষে একলা চলিস তুই

রাক্ষসী তুই কেউ জানেনা তোর শরীরেও জুঁই

শহর জুড়ে আলোর বাতি দীপাবলির চরে

তোদের মতো অলক্ষ্মীরা সেই আলোতে মরে




লক্ষ্মী আসে আয়েশ পায়ে উঠোন জুড়ে রোদ

সেই তো আলো সেইটুকুতেই জোনাকপাখা শোধ

ঘরের দাওয়ায় অপেক্ষারা আলপনা দেয় মোহে

উঠবে ফসল ক্ষেতভরা ধান স্বপ্ন বসে চোখে

এইটুকু তো চাওয়ার ছিল এইটুকু তো পাওয়া

এরজন্যই সুখসাগরে এক শতকের ছাওয়া




অলক্ষ্মীরা পথ ছেড়ে দেয় লক্ষ্মী আসে ঘরে

সত্যি সত্যি লক্ষ্মী আসে সপ্ত ডিঙা ভরে?

কোথায় লক্ষ্মী কোথায় তার কাঁখের কলস ভরা

ঝাপসা চোখে দাহনজ্বালা অনেক ভুলে ভরা

মড়ক আছে খিদের পেটে কান্না দিয়ে ধুই

কষ্ট বুকে ভাতের খোয়াব লক্ষ্মী কোথায় তুই?

কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়


	    
পুকুরঘাট

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *