আঁধার-যখন-চার-পর্বের-গল্প/পর্ব-১

আঁধার-যখন-চার-পর্বের-গল্প/পর্ব-১

আঁধার যখন

নন্দিনী চট্টোপাধ্যায়

পর্ব-১

   টম সামনের বাড়িটার দিকে চেয়েছিলমস্ত বড় এক একটেরে জরাজীর্ণ বাড়ি গ্রামের বসতি থেকে বেশ খানিকটা দূরে এই গ্রামের দিকে এমন বাড়ি বড় একটা চোখে পড়েনা হয়তো অতীতে জমিদার গোছের কেউ গ্রামের দিকে মস্ত একখানা বাড়ি করে রেখেছিলেন অবরে সবরে এসে বিশ্রাম করতেন হয়ত কিন্তু সেও মনে হয় বহুদিনের কথা নইলে এ বাড়ি এমন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে কেন ?তবে এখন কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে সেই জমিদারের পরিবারের কোন বংশধর নাকি হঠাত মাটি ফুঁড়ে উদয় হওয়ার মত এসে উপস্থিত হয়েছে আর এসে বাড়িটার বেশ কিছু ঘর গ্রামের দু চারজন লোককে দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করিয়ে রীতিমত বসবাস করতে শুরু করেছে বংশধরটি মহিলা আর তার সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী হল এক খুনখুনে বুড়ো

এই গ্রামের নাম প্যামপন্ট ফরাসি জিভে প্যাঁপোঁ তবে টমের কপালটাই মন্দ সে এই প্যাঁপোঁ গ্রামে আসার পরের দিনই  মস্ত লটবহর নিয়ে এই মহিলা কোথথেকে এসে উপস্থিত হল কে জানে ! বাড়িটা ফাঁকা পেলে সাফসুরত করে সে অন্তত কিছুদিন বসবাস করতে পারত ওখানে কবে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে ! যেখানেই সে যাচ্ছে দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়ছে না তার ভয়াবহ মহামারী বিউবোনিক প্লেগ আবার গ্রাস করেছে ইউরোপকে এবার তার থাবার আঁচড় ফ্রান্সের উপরেই সবচেয়ে বেশি পড়েছে অতিমারীর নখরাঘাতে ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছে ফ্রান্স

টমের বাপ দাদা সব অনেক পুরুষ যাবত  লন্ডনেরই বাসিন্দা ছিল কিন্তু ১৬৬৫ খ্রিঃতে প্লেগ শুরু হয়ে যাওয়ার পরেই সব হিসেব কেমন ওলট পালট হয়ে গেলটমেদের সন্ডার্স বংশের বেশিরভাগই সাফ হয়ে গেল সেই মহামারীতে প্রায় সকলেই মারা গেল আর শুধু টমেদের সন্ডার্স পরিবার কেন ? লন্ডনের অর্ধেক লোকই নাকি সেই রোগে মারা গিয়েছিল তাদের বাড়ি ছিল লন্ডন প্রাচীরের লুডগেট দরজার কাছে এক দরিদ্র পল্লিতে লন্ডন শহরের সীমানায় যে  মস্ত প্রাচীর সেই প্রাচীরের নাকি অনেকগুলো দরজা ছিল মা স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে এখনো নামগুলো মাঝে মাঝে বলে —– লুডগেট, নিউগেট, অল্ডারসগেট ক্রিপলগেট মূরগেট, বিশপসগেট আর অল্ডগেট

  নাঃ কোনদিনই বড়লোক ছিলনা তারা তার বাপ দাদারা প্রত্যেকেই কোন না কোন বড়লোকের বাড়িতে সহিসের কাজ করত নিজেদের বাড়িতেও নাকি বুড়ো ঘোড়া রাখত তারা মনিবের ঘোড়াগুলি বৃদ্ধ হয়ে গেলে হয় তাদের মেরে ফেলা হত নতুবা সহিসকে দিয়ে দেওয়া হত টম মায়ের কাছে শুনেছিল যে লুডগেটের কাছে একটা গরিব পাড়ায় তাদের বাড়ি  ছিল তাদের মত  গরিব লোকজনই থাকত সেখানে পাড়াটা আবিল হয়ে থাকত পশুপাখির মল মূত্রে আর বিভিন্ন বাড়ি থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলা আবর্জনায় পৌরসভার সাফাইকর্মীরা দরিদ্রপল্লীগুলিতে বিশেষ যেতনা সেসময় নোংরা অঞ্চলে রোগ দ্রুত ছড়ায় টমদের পাড়াতেও তাইই হয়েছিল মহামারী শুরু হওয়ার দশ বারোদিনের মধ্যেই পাড়া ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল

টম তখন মাত্রই এক দুধ খাওয়া শিশু টমের বাবা অ্যালেক্স মৃত্যুশয্যায় তার মাকে রাজি করিয়ে বিশ্বস্ত একজন বন্ধুর সঙ্গে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দিয়েছিল সেই থেকে তারা ফ্রান্সেই রয়েছে অ্যালেক্সের সেই  বন্ধুও মহামারীতে তার সমস্ত পরিবারকে হারিয়েছিল দুনিয়াদারিতে একদম একা এক সব হারানো মানুষ প্রায় তার মায়ের মতনই টমের জ্ঞান হওয়ার আগেই মা সেই লোকটিকে বিয়ে করে নিয়েছিল মা তাকে সব না জানালে সে  কখনো জানতই না যে হাডসন ইভান্স তার জন্মদাতা পিতা নয়

 তারা  তিনজনে বাসা বেঁধেছিল ফ্রান্সের মার্সাই নগরে হাডসন লন্ডনে যে রকম কাজ করত মানে সহিসের কাজ এখানেও সে সেইরকম কাজ খুঁজে নিয়েছিল আর তার মা বেটি করত মার্সাই নগরের অভিজাতদের বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ টমের আরো দুই তিনটি ভাই বোন হয়েছিল এখানে টমের দায়িত্বে তাদের রেখে মা বাবা বেরিয়ে যেত কাজে টমই দেখে রাখত জন কেনি আর জিমিকে

মা বাবার কথা থেকে সে জানতে পারত যে  ইংল্যান্ডের চেয়ে ফ্রান্সের জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি বড়লোক অভিজাত এবং পাদ্রীরা এখানে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে , চরম বিলাসিতায় জীবন কাটায় আর গরিবরা প্রতিদিন আরো বেশি করে দারিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করতে বাধ্য হয় অভিজাতদের কর দিতে হয়না কিন্তু  তাদের মত গরিব থার্ড এস্টেটের লোকেদের উপর প্রতিদিনই করের বোঝা আরো বেশি করে চাপানো হয় এছাড়াও আছে রাজকর্মচারীদের অত্যাচার কথায় কথায় মানুষকে বাস্টিল কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় বিনা বিচারে আটকে রাখা হয় বহু বহু বছর তারপর বিনা বিচারে বিনা অপরাধে একসময় সেই একলা মানুষটি কারাগারের অন্ধকারেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় কেউ তার খোঁজ পায়না তার মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টি হয়না   বাস্টিলের পাথুরে উচ্চতা থেকে সীন নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় বন্দীদের মৃতদেহ

দারিদ্র্য ও কষ্টের মধ্যে বড় হয়ে উঠেছিল তারা চার ভাই বোন টম জন কেনি আর জিমি   নাহ হাডসন কখনোই তার ঔরসজাত তিন সন্তানের সঙ্গে টমের তফাত রাখেনি বন্ধু অ্যালেক্সের করুণ মৃত্যুর কথা মনে রেখে টমকে নিজের বড় ছেলের সম্মানই দিয়েছিল সে

 টম  বরাবরই ছিল একটু ছন্নছাড়া গোছের   যতক্ষণ বাড়ির কাজ বা রোজগারপাতির চেষ্টা করল ততক্ষণ একরকম কিন্তু তারপরেই সে নিজের মত সময় কাটাতে ভালবাসত মার্সাইয়ের পথে একা একা ঘুরে বেড়াতে ভালবাসত সে দেখত অভিজাতদের বিলাসিতার স্রোত আর তারই পাশাপাশি সমাজের নিচু তলার মানুষের ভয়াবহ জীবন সংগ্রাম সম্রাট  চতুর্দশ লুইয়ের আমল সেটা   মার্সাইয়ের লোকের মুখে সে শুনেছে যে এর আগের  সম্রাটের আমলেও নাকি পরিস্থিতি একই রকম ছিল টম ভাবত কখনো কি পরিস্থিতির  পরিবর্তন হবেনা ? এমন কেউ কি কখনো আসবে না যে বলবে  চলবেনা এই অরাজকতা পরিস্থিতির বদল চাই মানুষের জন্য ন্যায্য অধিকার চাই

এইসব আজব ভাবনা সব সময় তার মন জুড়ে থাকত তার মা বেটি বলত টম তুই কী রকম ছেলে রে ? তোর বয়সে ছেলেরা বিয়ে থা করে সংসার করছে দুই তিন বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে আর তোকে দেখ? আজব সব ভাবনা নিয়ে দিন কাটাচ্ছিস তোর ভাই বোনেদেরও তো বিয়ে হয়ে গেল বাবা এবার তুইও একটা বিয়ে থা কর

 এসব কথা শুনে টম হাসত বলত মা বিয়ে করে কী করব ? লেখাপড়া তো শিখতে পারিনিবিয়ে হয়ে যখন ছেলে পুলে হবে তখন কী হবে মা ?আমাদেরই মতন কতগুলো অপোগন্ডের আবার জন্ম হবে  ?’

বেটি গালে হাত দিয়ে বলত কিযে বলিস বাবা বুঝতে পারিনা আমাদের মত লোকেদের জীবন তো এরকমই আমরা খাটব খাব বড়মানুষেরা আনন্দ করবে ওরা লেখাপড়া শেখে আমাদের ঘরের ছেলে মেয়েরা কেউ লেখাপড়া শেখার কথা ভাবতেও পারেনা বাবা

সেটাইতো আমার প্রশ্ন মা আমাদের মত ঘরে কেউ লেখাপড়া শেখার কথা ভাবেনা কেন ?’

টমের মা এইসব কথার সামনে কোন উত্তর দিতে পারত না আস্তে আস্তে সরে যেত সামনে থেকে

একটা সময়ের পর টম তার বাবা মাকে  বড়লোকদের বাড়িতে কাজ করতে দেয়নি বাবার জায়গায় সে কাজ করত  বাবা মায়ের সঙ্গে মার্সাইয়ের সহিসপাড়ায় থাকত সে অন্য ভাই বোনেরা যে যার পরিবারের সঙ্গে আলাদা আলাদা জায়গায় থাকত টম ছাড়া আর কেউ সহিসের কাজকে জীবিকা হিসাবে নেয়নি টম বিয়ে করেনি বিয়ে থা করার কথা সে কখনো ভাবেওনি তার সমস্ত মন জুড়ে থাকত তার পালক পিতা হাডসন আর মা বেটি সে কখনো প্রভু যীশু বা মা মেরীর কথা ভাবেনি হাডসন আর বেটিই ছিল তার জীবন্ত ঈশ্বর বেশ কেটে যাচ্ছিল দিন এই মার্সাই শহরে টম পাঁচ থেকে পঞ্চাশে পৌছে গেল তার ভাই বোনেরা এখন ঘোর সংসারী কিন্তু টম আজো সেই বিশ বছরের মনটি নিয়ে আনন্দময় জীবন কাটিয়ে চলেছে

বেটির হাঁটুতে বাত হাডসনের কোমরে ব্যথা আর টমের বাউন্ডুলে স্বভাব এসব নিয়ে দিব্য সময় কাটছিল এর মধ্যে সম্রাট চতুর্দশ লুইয়ের বাহাত্তর বছরের সুদীর্ঘ রাজত্বকালের অবসান হয়ে পঞ্চদশ লুইয়ের আমল শুরু হয়েছে

  চতুর্দশ শতাব্দী থেকে যে প্লেগ নামক মহামারীর আগমন ঘটেছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে সেই আতঙ্কের অবসান ঘটেনি তবু মানুষ বার বার চেষ্টা করেছিল ভাল থাকার   নতুন আশায় বুক বাঁধতে চেয়েছিল বারবার কিছুদিন পর পর ফিরে আসত প্লেগ কিন্তু ভয়ঙ্কর কিছু ঘটত না বলে মানুষ পুরো ব্যাপারটার সঙ্গে কোনভাবে মানিয়ে নিত বেটি বলত  প্লেগে কিছু কিছু মৃত্যু ঘটলেও লন্ডনের মত ভয়াবহ আতঙ্কের পরিবেশ এখনো ফ্রান্সে তৈরি হয়নি ফ্রান্সের মানুষ মোটের উপর ভাল আছে

প্লেগের ভয় মহামারীর ভয় একটা অদৃশ্য শত্রুর মত অন্তরীক্ষে ঘোরাফেরা করে কিন্তু  মরণকামড়  বসাতে পারেনাতাই প্রত্যেক  বছরেই মানুষ ভাবে যে এখনো যখন বেঁচে রয়েছি তখন নিশ্চয়ই পরের বছরেও টিকে থাকব দিন কাটে আশায়  দিন কাটে চাপা আতঙ্কে

কিন্তু  পরিস্থিতি যাই হোক না কেন পিছুটান  তেমন কিছু না থাকার জন্য টম নির্ভার জীবন কাটাত মার্সাই ছাড়ার আগে সে কাজ করত ব্যারন দ্য বয়ারের বাড়িতে ওদের সঙ্গে নানান জায়গায় গিয়ে ফ্রান্স দেখেছিল টম একবার গিয়েছিল  ফ্রান্সের দক্ষিণ পশ্চিমে বোর্দো শহরেসেখান থেকেও প্রায় পঁচিশ  মাইল দক্ষিণে একটা জায়গায় ব্যারনের এক আত্মীয় থাকেন জ্যাকস দ্য সেকেন্দাঁ ব্যারন দ্য বয়ার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন টমের খুব ভাল লেগেছিল সেখানে গিয়ে সাধারণ অভিজাত পরিবারের থেকে কেমন আলাদা এদের হাবভাব ।।জ্যাকস দ্য সেকেন্দাঁর পুত্র মন্তেস্কুকে দেখে আরো অবাক লেগেছিল টমের অল্পবয়সি ছেলে কিন্তু বুদ্ধির দীপ্তি শাণিত তরবারির মত ঝলকে ওঠে মন্তেস্কুর কাছ থেকে সেই প্রথম ভদ্রজনোচিত সম্বোধন পেয়েছিল টম প্রথমে তার পুরো নাম জিজ্ঞেস করেছিল মন্তেস্কু তারপর তাকে একটি কাজে পাঠিয়েছিল সে টম সন্ডার্সের এই পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে সেই প্রথম কেউ তাকে মঁসিয়ে সন্ডার্স বলে সম্বোধন করেছিল টম আনন্দে বিড়বিড় করে কিছু বলতে গিয়েছিল বোধহয় চোখে জল এসে গিয়েছিল তার টম বলতে চেয়েছিল মঁসিয়ে আপনার কিছু ভুল হচ্ছে আমি ব্যারনের ঘোড়ার গাড়ির সহিস মাত্র উত্তরে মন্তেস্কু মুচকি হেসে শুধু বলেছিল না আমার কোথাও ভুল হয়নি আমি আপনাকে সঠিক সম্বোধনই করেছি

পরের দিনই ব্যারনের মার্সাইতে ফিরে আসার কথা ছিল আগের দিন সন্ধ্যায় সুবিশাল হলে মনিবেরা সকলে বসে কথাবার্তা বলছিলেন বাইরে ঘোড়াগুলিকে দানাপানি দিতে দিতে টম কান খাড়া করে মন্তেস্কুর কথাগুলি শোনার চেষ্টা করছিল নানা কথার ভিড়ে দৈববাণীর মত ভেসে আসছিল মন্তেস্কুর মুখের কথাগুলি মন্তেস্কু বলছিল –‘ভাগ্যে বা ঈশ্বরের প্রভাবে কেউ শাসক হয়নারোমানদের দিকে চেয়ে দেখুন যখন তারা  ক্রমাগত সাফল্য লাভ করেছে তখন তারা সুনিশ্চিতভাবে সঠিক কোন পরিকল্পনার দ্বারা নিজেদেরকে পরিচালিত করেছে  আবার যখন তাদের ব্যর্থতা এসেছে তখনো  অবশ্যই তারা নিজেদের  কোন পরিকল্পনার ভুলে অসফল হয়েছে প্রত্যেক রাজতন্ত্রের উত্থান , সুরক্ষিত থাকা এবং  চূড়ান্ত পতন সবই নিয়ন্ত্রিত হয় নৈতিক ব্যবহারিক কারণের দ্বারা ফরাসি রাজতন্ত্রেরও পতন আসন্ন যে রাজতন্ত্র মানুষে মানুষে এত ব্যবধান তৈরি করে দেয় সেই রাজতন্ত্র আর বেশিদিন টিকবেনা আ্মার বিশ্বাস নয় স্থির সিদ্ধান্ত সাম্প্রতিক একটা ঘটনার কথাই বলি একখানা স্যাটায়ারিকাল ভার্স লেখার জন্য ভলটেয়ার নামে একটা ছেলেকে রাষ্ট্র কতটা শাস্তি দিল ভাবতে পারবেন না ছেলেটাকে বাস্টিল কারাগারে জানালাহীন দশফুট পুরু দেওয়ালের একটা মারাত্মক ঘরে ১৭১৭ খ্রিঃর মে মাস থেকে আটকে রেখে দিয়েছে কবে মুক্তি দেবে কে জানে বাক স্বাধীনতা হরণ মানুষের সামান্যতম অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার শাস্তি এই রাজবংশ এবং এদের অনুগামীদের একদিন পেতেই হবে ‘ 

 এমন করেও ভাবা যায় ! টম চমতকৃত হয়েছিল মানুষ হিসাবে সম্মান পাওয়ার সম্মান দেওয়ার কথা বলছে এই ছেলেটা ! অভিজাত ব্যারন বংশের ছেলে হয়ে এত লেখাপড়া শিখেও সে মানুষকে মানুষের মত গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে ! এযে অবিশ্বাস্য ! প্রৌঢ় টম সেদিন অন্তর থেকে ছেলেটাকে অনেক আশীর্বাদ জানিয়েছিল আহা ভাল থাক ছেলেটা ওর দ্বারা মানুষের ভাল হোক

মার্সাইতে ফিরেও যেন কয়েকদিন ধরে বোর্দো যাওয়ার ঘোরটা ভাঙছিল না টমের কিন্তু টমের ঘোর ভাঙল কি  ভাঙলনা সে বিষয়ে নিয়তির কোন মাথাব্যথা ছিলনা টম মার্সাইতে ফেরার দিন দশেকের মধ্যেই দক্ষিণ ফ্রান্স ভয়াবহ বিপদের মধ্যে নিমজ্জিত হল এই বিপদের নাম মহামারী এবং মহামারীর নাম  বিউবোনিক প্লেগ

পশ্চিম ইউরোপের ভয়াবহ বিউবোনিক প্লেগ এবার  প্রবলভাবে থাবা বসাল দক্ষিণ ফ্রান্সের মার্সাই শহরে কদিন যাবতই এখানে ওখানে মানুষের জ্বরে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছিল প্রত্যেকেই ভাবছিল যে প্রতি বছরই যেমন প্লেগ ঘুরে ফিরে আসে তেমনিভাবেই এসেছে আবার কিছুদিন দু দশটা লোক মরবে তারপর আবার শান্ত হবে সব

তাদের সহিস মহল্লাতেও কটা লোক পরপর মরল তার মা বেটি বলল কটাদিন কাজে যাওয়া বন্ধ করনা টম যেভাবে রোগ ছড়াচ্ছে তাতে কটাদিন ঘরে বসে গেলেই ভাল কাজ যায় যাক কিন্তু প্রাণ বাঁচানো আগে দরকার

প্রথম জীবনে লন্ডন থেকে পালিয়ে আসার সেই ভয়াবহ স্মৃতি , প্লেগে সমস্ত পরিবারকে উজাড় হয়ে যেতে দেখা প্রথম স্বামীকে অসহায়ের মত মরতে দেখা , ছোট্ট টমকে নিয়ে হাডসনের হাত ধরে মৃত্যুপুরী লন্ডন থেকে পালানো সব এক এক করে তার মনে পড়ছিল হাডসন এখন আর বাইরে বিশেষ বেরোয়না কি এক রোগ হয়েছে তার বেশি হাঁটাচলা করলে হাঁপ ধরে বেটি তাই নিজেই বাইরের কাজ করে নেয় ঘরে বাইরে সবরকম কাজ করতে এই বৃদ্ধ বয়সে তারও খুব কষ্ট হয় কিন্তু সেকথা টমকে ঘূণাক্ষরে বলেনা সে টম যে কী ভালবাসে মাকে ! মায়ের শরীর আর বয়না জানতে পারলে হয়তো এই পঞ্চাশ পেরুনো টমই মাকে জড়িয়ে ধরে ছেলেবেলার মত কান্নাকাটি জুড়ে দেবে তাই বেটি  তার প্রথম জীবনের সুখস্মৃতির প্রতিনিধি বড় ছেলে টমের কাছ থেকে নিজের শরীর খারাপের বড় ছোট কথা সব সময়ই গোপন করে

বেটির কথায় টম বিশেষ পাত্তা দিল বলে মনে হলনা । সে বরাবরই একটু খেয়ালি । বলল  ‘আচ্ছা মা তুমি আমাকে নিয়ে কবে চিন্তা করা ছাড়বে বলতো ? আমি নিজেই একটা আধা বুড়ো লোক । আমাকে নিয়ে আমার বুড়ি মা আজো ভাববে ? তুমি নিজের যত্ন নাও তো মা ।‘

 

নন্দিনী চট্টোপাধ্যায়

Nila Banerjee

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 thoughts on “আঁধার-যখন-চার-পর্বের-গল্প/পর্ব-১

  1. এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। আপনার কলমে চড়ে চলে গেলাম এক অচেনা অজানা জগতে। ভীষণই ভালো লাগলো।❤️❤️

  2. শুরু তে ই মজে গেলাম। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম চতুর্দশ লুই এর রাজত্ব র সঙ্গে বর্তমানে আমাদের দেশের শাসকদের আচরণ এর এখনো কত মিল রয়ে গেছে ❗
    পরের পর্ব র অপেক্ষায় রইলাম 👍

  3. পুকুরঘাটের সদস‍্যা হিসেবে নিজে কে গর্বিত মনে করি।

  4. অসম্ভব ভালো লাগলো,পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম 💖

  5. বেশ লাগছে পড়তে। বিদেশি গল্পের মতো।

  6. খুব ভালো লাগছে। আজকের কোভিদ অতিমারীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বিগত শতকের মহামারীকে নতুন চোখে ফিরে দেখা যেন।

  7. অদ্ভুত এক আকর্ষণ আছে আপনার লেখায়।পরের পর্বে যাই..

  8. পড়তে পড়তে কোথায় করোনা আর প্লেগ মিলেমিশে গেল তা বলার নয়। কি অসম্ভব অন্ধকারের সঙ্গে অন্ধকারের মিল

Others Episodes