আঁধার যখন/চারপর্বের গল্প/শেষ পর্ব

আঁধার যখন/চারপর্বের গল্প/শেষ পর্ব

আঁধার যখন

নন্দিনী চট্ট্যোপাধ্যায়

 

 

দোতলায় এসে পৌঁছাল সেসামনেই একটা খোলা বড় জানালা   এ জানালাটারও পাল্লা ভাঙা ভাঙা জানালা দিয়ে বহুদূর অবধি দেখা যায়দিঘি পেরিয়ে রাতের জঙ্গলের গহন নজরে আসে আকাশে মরা জোছনার আলো দিঘির ধারে উঁচু একটা টিলা আরেঃ ওটা কী ? টিলার খাঁজে পা রেখে রেখে প্রায় মাকড়শার মত ভঙ্গিতে  অত বড় ওটা কী নেমে আসছে ? ওটা কী মানুষ না অন্য কিছু ? ওর পেটের কাছটা অত ফোলা কেন ?  ভয়ে টমের গায়ের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল ! ভোর হয়ে আসছে আঁধারে মিশে যাচ্ছে হালকা আলো তবু ভাল ভাবে ঠাহর হয়না  ওই মাকড়শার মত জীব কোথা থেকে এল ? একি সত্যিই কোন মানুষ না অলৌকিক অপার্থিব কোন অস্তিত্ব?টম ওখানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে জীবটির গতিবিধি লক্ষ্য করতে লাগল কিন্তু কী ভয়ঙ্কর ! জীবটি যে টিলা থেকে নেমে সন্তর্পনে এই বাড়ির দিকেই গুঁড়ি মেরে রওনা দিয়েছে   এই বাড়িতেই ঢুকবে না তো ওটা ?

সেই কালো রঙের কাপড় পরা দুষ্কৃতীরা  উঠানে সেই ভয়ঙ্কর দর্শন মূর্তিটিকে রেখে মূর্তির চারপাশে হাড়ের বৃত্ত রচনা করেছিল বৃত্তের চারপাশে ঘুরে ঘুরে অদ্ভুত সব মন্ত্রপাঠও করেছিল ! এই অদ্ভুত জীব সেই সব মন্ত্র তন্ত্রের প্রভাবে জেগে উঠছে নাতো ! টম কোনদিনই ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয় মন্ত্র তন্ত্র কালা জাদু কোন কিছুই বিশ্বাস করেনা সে তবু আজ সে প্রাণপণে মা মেরীকে ডাকতে লাগল রক্ষা কর ঈশ্বর শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা কর আমাকে ওঃ জীবটা যে এই বাড়ির একেবারে কাছে এসে গেছে ! এ বাড়িটার উঠান যেখান থেকে শুরু হচ্ছে সেখানে এসে সটান খাড়া দাঁড়িয়ে উঠল সেটা টম অবাক হয়ে দেখল যে এতক্ষণ অল্প আলোয় ঠাহর করা যাচ্ছিল না ওটা জীবটার শরীরের ফোলা অংশ  নয় মাকড়শার মত জীবটার গায়ের সঙ্গে লেপটানো রয়েছে কালো রঙের এক মস্ত পোঁটলা এবং জীবটি কালো পোষাক পরা একজন মানুষ অন্য কোন প্রাণী নয় তবু টমের ভয় কাটল না একি সেই লোকগুলির মধ্যে একজন ? আবার ফিরে এসেছে ! অন্য লোকগুলিই বা কোথায় লুকিয়ে রয়েছে ? টম সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় অসহায় বিবশের মত পরবর্তী কোন ভয়াবহ ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল  

বাইরে  দাঁড়িয়ে সবদিকটা ভালভাবে একবার দেখে নিল সেই মানুষটি তারপর প্রায় ছুটে এসে দাঁড়াল সদর দরজাটার সামনে টমও তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে  দাঁড়িয়ে রইল সদর দরজার পিছনে এত বছরের ঘোড়ার লাগাম ধরা কড়া পরা শক্ত দুটি হাত তার এই বয়সেও একজন দুজনকে ধরাশায়ী করার ক্ষমতা রাখে সে লোকটির গতিবিধি দেখে সে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে অন্তত লড়াই করে মরবে সে আন্দ্রের রক্তাপ্লুত ছিন্ন মুন্ড তার রক্তে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল এঘরে একটা ভাঙা চেয়ার ছিল টম তার থেকে একটা হাতল খুলে নিল

 দরজার চাবি ঘুরল টম প্রস্তুত হয়েই ছিল দ্রুত এগিয়ে গিয়ে টান দিয়ে খুলে ফেলতে চেষ্টা করল লোকটির কালো রঙের অঙ্গাবরণ টান দিয়ে ধরল শরীরের সঙ্গে বাঁধা সেই বিশাল পোঁটলাটি দেখতেই হবে কী আছে ওতে ?পোঁটলাটি লোকটির শরীর থেকে খুলে পড়ল একপাশেকিন্তু একি ? পোঁটলা থেকে বেরিয়ে এল অদ্ভুত এক জান্তব আর্তনাদ , ফ্যাঁসফ্যাঁস শব্দটম চমকে ছিটকে সরে এল টমকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে উদ্যত ছোরা নিয়ে টমের দিকে ধেয়ে এল সেই ব্যক্তি ‘তুমিও ওই লোকগুলির দলে ? ছাড়ব না তোমাকে আজ ‘ মাথায় মুখে জড়ানো কালো কাপড় এখন সরে গেছে তার বিবর্ণ ঠোঁটে ক্লান্ত হিংস্রতা গলার স্বর বিধ্বস্ত বিকৃত

টম  ব্যক্তিকে দেখে মারাত্মক চমকে উঠল তবু চমক ভেঙে শান্তভাবে এগিয়ে এল সে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে বলল ‘ আমাকে আপনি মেরে ফেলতে পারেন মাদাম কিন্তু আমি আপনাকে  সাহায্য করতেই এসেছি কাল রাতে  এখান দিয়ে যাওয়ার সময় পুরো ব্যাপারটা দেখেছি আমি   আমি তখন এখান থেকে চলে যেতে পারিনি মাদাম আমার মনে হয়েছিল আপনার জীবন বিপন্ন তাই— এখনো রয়ে গেছি এখানে—‘

টমের  গলায় আকুতি উদ্যত ছোরা খসে পড়ল মহিলার হাত থেকে ‘ তুমি ওদের কেউ নও তো ? সত্যি বল

‘আমি আমার মা বাবার নামে শপথ করে বলছি মাদাম যে আমি ওই লোকগুলিকে চিনিনা ওদের সঙ্গে আমার কোন সংস্রব নেই এমনকি আমি এই গ্রামেরও লোক নই আমার নাম টম সন্ডার্স ।আমি প্লেগের ভয়ে বহুদূর থেকে এখানে এসেছিএদিকে প্লেগ হচ্ছেনা তাই এসেছি মাদাম বিশ্বাস করুন

এবার মহিলাটি বোধহয় কিঞ্চিত আশ্বস্ত হলেন ভয়ার্ত গলায় বললেন ‘ আমায় সাহায্য করুন মসিয়েঁআমি আর আমার বাচ্চাদের প্রাণ বিপন্ন ওই লোকগুলি আমার বাচ্চাদের মেরে ফেলতে চায়

মাদামের বাচ্চা আছে ! কই দেখেনি তো সে আগে যাইহোক  সে মহিলাকে বলল ‘ মাদাম আমাকে পুরো ব্যাপারটা বলুন নইলে আমি কিছুই বুঝতে পারবনা আচ্ছা আপনি কি জানেন যে আন্দ্রে কাকাকে মেরে ফেলা হয়েছে ? বাড়ির পিছনদিকে পড়ে আছে ওর মৃতদেহ ?

‘কী বলছেন আপনি !’ মাদামের সারা শরীর কেঁপে উঠল চোখে জল টুপুটুপু নাহ এখন  কোন আদব কায়দা নয় মাদামকে আগে শান্ত করতে হবে টম মাদামের হাত ধরে একটি  হাতল ভাঙা গদি ছেঁড়া চেয়ারে বসাল বলল ‘ এবার বলুন মাদাম কী হয়েছে ?’

সকাল হয়েছে সূর্যের শান্ত সুন্দর রশ্মি ছুঁয়ে যাচ্ছে ওক গাছের মাথা পাখি ডাকছে দুটো স্টার্লিং ওক গাছের ডালে  বসে দোল খাচ্ছেচারটে ব্ল্যাক বার্ড মাটিতে পোকা খুঁজছে আর  দূরে কোথাও ডাকছে একটা উড পিজিয়ন গতরাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা যেন যাদুকরের এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় কোথায় মুখ লুকিয়েছে !

মাদামের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিল বললেন ‘ এইসময় আমার বাচ্চাদের আন্দ্রে কাকা নিজে হাতে খাওয়াত

টমের মন থেকে বাহ্যিক আদব কায়দা মানার ব্যাপারটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে চোখের সামনে ভাসছে শুধু মাদামের কান্না ভেজা মুখ আর  অজানা বিপদের অতর্কিত আক্রমণের ভয় সে এগিয়ে এসে মাদামের হাত দুটি ধরে বলল ‘ বলুন মাদাম খুব বেশি সময় নেই  হাতে ওরা কখন ফিরে আসে কে জানে ! আপনি বলুন আমি শুনি

‘হ্যাঁ এই বলি আমরা ব্যারন পরিবারের মানুষ কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস আর কুসংস্কারের শিকার আমাদের প্রাসাদ ছিল বোর্দো শহর থেকে আরো অনেক দূরে একটি গঞ্জে শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশ আমাদের ভাল লাগত না আমরা তাই বরাবরই শহরের কোলাহল থেকে দূরে থাকতাম এতে আমাদের সন্তানরাও ভাল থাকত লিও এন্থনি লরা ক্যামিল ফ্রাঙ্কোয়েস হেনরি আর  জিনি

 টমের বিস্মিত মুখখানির দিকে চেয়ে মাদাম  ক্লিষ্ট হেসে বলেন ‘ওরা কেউ মানুষ নয় ওরা আমার পোষা বিড়াল আর ওদের জন্যই এত বিপদ আমার ঐ লোকগুলি ওদেরকে কেড়ে নিতে চায় মেরে ফেলতে চায় বিড়ালগুলিকে লোকগুলির স্থির বিশ্বাস যে  বিড়ালদের জন্যই ফ্রান্সে প্লেগ এসেছে ঠিক যেমন অনেক মানুষ বিশ্বাস করেছিল যে ১৬৬৪ খ্রিঃতে আকাশে ধূমকেতু দেখা গেছে বলেই লন্ডনে প্লেগ  হয়েছেএবারেও ঠিক তেমনি অন্ধবিশ্বাসীদের রটনা যে বিড়াল বিশেষত কালো রঙের বিড়ালদের অশুভ প্রভাবের জন্য প্লেগের এত বাড় বাড়ন্ত ! আমার সব কটি বিড়ালই কালো বিড়াল আর তাই  ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানরা দীর্ঘদিন যাবত আমাকে উত্যক্ত করে ছাড়ছে এখন তো দেখা যাচ্ছে ওরা হত্যা করতেও পিছপা হচ্ছেনা হতভাগ্য আন্দ্রে কাকাকে কিভাবে হত্যা করেছে ওরা ! হা ঈশ্বর !!’

মাদাম ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন মাদামের আকুল কান্নায় সেই কালো পোঁটলাটা ফুলে ফুলে উঠতে লাগল সঙ্গে ঘড় ঘড় একটানা আওয়াজ মাদাম পোঁটলাটার কাছে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন টম উতকন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করল ‘পোঁটলাটার মধ্যে কী আছে মাদাম ?’

মাদাম উত্তর না দিয়ে আস্তে আস্তে পরম মমতায় পোঁটলাটা খুলতে লাগলেন একে একে বেরিয়ে এল সাত সাতটি কালো বিড়াল যাদের নাম লিও এন্থনি লরা ক্যামিল ফ্রাঙ্কোয়েস হেনরি আর  জিনি সকলের মুখে জাল লাগানো মাদাম পরম মমতায় এক একজনের জাল খুলে দিতে লাগলেন ওরা মাদামের গায় মুখ ঘষতে লাগল মাদাম চোখ বন্ধ করে ওদের আদর অনুভব করতে করতে বললেন ‘ ওদের মুখে  সব সময় জাল পরিয়ে রাখি এই বাড়ির নিচের করিডোরে দেওয়ালের মধ্যে গর্ত করে ওদের থাকার জায়গা বানিয়েছি এই বাড়িতে চট করে কেউ ঢুকলেও ওদের অস্তিত্ব টের পায়না ওরা ডাকেনা তাই ওদের অবস্থান ধরতে পারা যায়না 

টমের মনে পড়ল তাই সেদিন নিচের করিডোর দিয়ে বেরোতে গিয়ে মনে হয়েছিল যে অনেক জোড়া চোখ তার দিকে চেয়ে র‍য়েছে

 মহিলা এই ঘরেরই একটা লুকনো জায়গা থেকে শুকনো মাছ বের করলেন পরম মমতায় এক একজনকে খাইয়ে দিতে লাগলেন মাছগুলি

টমের মুগ্ধ চোখে নারীটির এই নতুন রূপ অপূর্ব সুন্দর বলে মনে হল ওদেরকে খাওয়াতে খাওয়াতে একবার টমের দিকে চেয়ে কিশোরীর আনন্দে হাসল নারীটি প্রৌঢ় টমও কৃতার্থের মত হাসল বিড়ালগুলির খাওয়া হয়ে গিয়েছিল ওরা টমের কাছে এসে কোলে কাঁখে উঠছিল টম ওদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিল

মাদাম বললেন ‘ আমার বাবা মাও বিড়াল পালন করতেন প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মানুষ কালো বিড়াল পোষে না কিন্তু আমরা আধুনিক ভাবনার মানুষ আমরা মানুষের অন্ধ বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করার জন্য বেশিরভাগ কালো রঙের বিড়ালই পালন করতাম আমার দিদি খুব অল্প বয়সে মারা  গিয়েছিল মা দিদিকে খুব বেশি ভালবাসতেন মাও দিদির মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান , ছিলাম শুধু আমি আর বাবা ব্যারন হওয়ার জন্য বাবার অনেক অনুগত জন ছিল আবার  অতি আধুনিক চিন্তাভাবনায় বিশ্বাসী হওয়ার জন্য বাবার অনেক শত্রুও ছিল কিন্তু বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন বাবার প্রভাবে কেউ কোনভাবে বিরক্ত করার সাহস পায়নি বাবা হঠাত মারা গেলেন দেশে প্লেগ শুরু হল আর তারপর থেকেই  এই  শয়তানগুলো আমার পিছনে লেগেছে ওদের হাত থেকে পালাতে পালাতে আমি আমাদের এই প্রাচীন সম্পত্তিতে  দীর্ঘদিন পরে  এসে হাজির হই আমার সঙ্গে সব সময় ছিল আমাদের বহু পুরনো ভৃত্য আন্দ্রে কাকা কিন্তু দেখুন মসিয়েঁ সেই আন্দ্রে কাকাকেই আমি বাঁচাতে পারিনি গতকাল ওরা ভালরকম প্রস্তুত হয়ে এসেছিল আমি বুঝতে পেরেই বাচ্চাগুলোকে দ্রুত পোঁটলা বেঁধে নিয়ে জঙ্গলের দিকটায় পালিয়ে যাই   আমার বাচ্চারা এখন টুঁ শব্দটিও করেনা বুঝতে পারে আমার অসহায়তা

 এই কথাগুলো বলার সময় মাদাম অনরবত  কাঁদছিলেন টম এক মুহূর্ত ভাবল তারপর বলল ‘ আমাদের সামনে দুটো কাজ এক আন্দ্রে কাকার সৎকার আর দুই এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি হয় পালানো আচ্ছা মাদাম আপনার পরিচিত এমন কেউ কি  নেই যিনি এই অন্ধ বিশ্বাসের উর্ধ্বে উঠতে পারেন ? যিনি সত্যিই আমাদের সাহায্য করতে পারেন ?

‘আছে তো তার নাম মন্তেস্কু সে আমার আপন দিদির ছেলে সে এখন পারীতে থাকে মস্ত বড় বিচারপতি হয়েছে নাকি শুনতে পাই তবে আমার দিদি মারা যাওয়ার পর থেকেই দিদির স্বামী জ্যাকস সেকেন্দাঁ আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি তবে মন্তেস্কু খুবই উন্নত মনের মানুষ হয়েছে বলে শুনেছি সমাজের বহু অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সে লড়ে চলেছে ঘূণ ধরা রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সে প্রতিবাদ জানিয়েছে

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে টমের নিজেরও যে ওই একটি মানুষের কথাই মনে পড়ছিল সেই মানুষ যিনি প্রথমবার টম সন্ডার্সকে মানুষ বলে সম্মান করেছিলেন সে বলল ‘ এই সকালবেলা কালা জাদুকরেরা আর এদিকপানে ঘেঁষবে বলে মনে হয়না চলুন আপনি আর আমি মিলে এই উঠানেই আন্দ্রে কাকাকে সমাধিস্থ করি ‘ 

আন্দ্রের দেহটা টেনে এনে সদ্য খোঁড়া কবরে  যত্ন করে শুইয়ে দিলেন মাদাম টম মাটি ফেলে ফেলে গর্তটা বুজিয়ে দিল কয়েকটা উড পিজিয়ন ফর ফর শব্দ করে উড়ে বেড়াচ্ছে চারিদিকে আন্দ্রের কবরের বিপরীত দিকে  বীভৎস অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গত রাত্রের প্রোথিত মূর্তিটিমূর্তির চারপাশে হাড়গুলি এখনো সেইভাবেই মাটিতে প্রোথিত  হঠাত দেখলে গা ছমছম করে ওঠে

মাদাম ঐদিকে চেয়ে বললেন ‘ দেখুন মঁসিয়ে , আঙ্কুর মূর্তি

টম আশ্চর্য হয়ে বলল ‘আপনি এই নাম জানেন ? গতকাল রাতে ওই সাংঘাতিক লোকগুলির মুখে এই নামটিই যেন বার বার শুনেছি

‘হ্যাঁ  ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানরা বিশ্বাস করে যে আঙ্কু নামে এক দেবতা অশুভের প্রতীক গভীর রাতে সে পথে পথে  অমঙ্গলের বার্তা ছড়িয়ে ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই মানুষের প্রাণ হরণ করে ওরা কাল আমার এবং আমার বাচ্চাদের প্রাণ  নেওয়ার জন্য আঙ্কুর উপাসনা করছিল আর তার পরেই আমার বাড়িতে ঢুকে আমাকে পেলনা বলে আন্দ্রে কাকাকে হত্যা করেছে কত বড় শয়তান ওরা !’

টম মাদামের অসহায় মুখের দিকে চেয়ে কয়েকটি কথা দ্রুত ভেবে নিল বলল ‘ আমাদের এই মুহূর্তে একটি ঘোড়ার গাড়ি চাই দেখি গ্রামে খোঁজ করে — যত দ্রুত সম্ভব এই স্থান ত্যাগ  করতে হবে

টম রওনা হচ্ছিল গ্রামের মোড়ল ম্যাথুকে পুরো ব্যাপারটা জানিয়ে একটা ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায় কিনা দেখতে হবেনারীটি তার বাহু স্পর্শ করে তাকে ডাকলটম আপাদমস্তক কেঁপে উঠল এই স্পর্শে সেই সুমিষ্ট কন্ঠস্বর বীণার তারের মত বেজে উঠল , ’কোথাও খোঁজ করার দরকার নেই আমাদের নিজেদের ঘোড়ার গাড়ি আছে খুব ভাল ঘোড়াও আছে দুটি আন্দ্রে কাকা চালিয়ে নিয়ে এসেছিল এখানে বাড়ির পিছনের আস্তাবলে ঘোড়া দুটি বাঁধা রয়েছে গাড়িটাও সেখানেই রাখা আছে দেখুন সেটিকে ওরা ধ্বংস করে গেছে কিনা

‘বাহ এত খুব ভাল ব্যাপার মাদাম আমি আজ তিরিশ বছর ঘোড়ার গাড়ি চালাচ্ছি অনেক অভিজাত পরিবারে আমি কাজ করেছিমার্সাইতে আমার এ কাজে সুনাম ছিল ভাল ঘোড়া আমার হাতে পড়লে আমি একখানা আস্ত রূপকথা বানিয়ে ফেলতে পারি মাদামঅনেকের নাগালের বাইরে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া আমার কাছে কোন ব্যাপার নয়

নারীটি বিস্মিতভাবে চাইল টমের দিকে ,‘মসিয়েঁ এখন কোথায় যাব আমরা ?’

‘চলুন  যেখানে আমি নিয়ে যাব আপাতত ব্রিটানির রাজধানী রেনে শহরে যাব আমরা ওখানকার প্রশাসকের কাছে আপনার ব্যারনেস খেতাবের সূত্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইবেন অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলে আপনি বিড়াল হত্যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চাইবেনকোন প্রশাসক অন্ধ বিশ্বাসকে সমর্থন দেবেন না মাদাম আপনি একা ছিলেন তাই তেমন ভাবে লড়তে পারেননি তারপর এই প্লেগ ফ্রান্সকে বিপর্যস্ত করে দিল সব এলোমেলো হয়ে গেল ! আমার তো সব শেষ হয়ে গেল ! আমার পরিবারের কে যে কোথায় আছে বেঁচে আছে কিনা জানিনা যাকগে কী আর করব যে কোন ভাবেই আমাদের বেঁচে থাকবার চেষ্টা জারি রাখতে হবে চলুন মাদাম আমরা বেরিয়ে পড়ি আর দেরি নয়

লিও এন্থনি লরা ক্যামিল ফ্রাঙ্কোয়েস হেনরি আর  জিনিকে বাক্স খাঁচায় ভরে নিজের সামান্য কটি ব্যবহার্য জিনিস গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ওরা তীব্র গতিতে প্যামপন্টের পথঘাট মথিত করে  সামনের দিকে ছুটে চলল দুটি তেজী ঘোড়া চালকের আসনে টম সন্ডার্স

দ্রুত পিছনে পড়ে থাকল গ্রামের পর গ্রাম

কিছুক্ষণ পরে পিছন থেকে মধুর সুমিষ্ট স্বরে একটি প্রশ্ন ভেসে এল ‘ মন্তেস্কুর সঙ্গে কি যোগাযোগ করব টম?’

‘অবশ্যই মাদাম রেনে শহরে পৌঁছে প্রথম কাজ হবে দ্রুতগামী কোন সংবাদ বাহককে দিয়ে পারীতে মন্তেস্কুকে বার্তা পাঠানোআপনাদের সঙ্গে ওঁর অনেকদিন যোগাযোগ ছিলনা ঠিকই কিন্তু আমার মন বলছে আপনার বার্তা পেলে তিনি নিশ্চয়ই সর্বশক্তি দিয়ে এইসব অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন আপনার পাশে দাঁড়াবেন আর কী আশ্চর্য দেখুন মাদাম ইঁদুর এই প্লেগের বাহক বলে শুনেছি কিন্তু ক্রমাগত বিড়াল নিধন করলে ইঁদুরের সংখ্যাই তো বৃদ্ধি পাবে ! তাইনা মাদাম?’

টম পথের দিকে চেয়ে ঘোড়া ছোটাচ্ছিল একটি সুমিষ্ট কন্ঠস্বর খুব আস্তে পিছন থেকে বলে উঠল ‘ টম আমার নাম কোলেট

প্রৌঢ় টম সন্ডার্স এক মুহূর্তের জন্য ঘোড়া থামাল ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে চাইল এক তাড়া খাওয়া মধ্যবয়সিনী ব্যারনেস স্থির দৃষ্টিতে তার দিকেই চেয়ে আছেনতাঁর দু চোখে জল পাশেই রাখা আছে একটি বাক্স খাঁচা তাতে পরম সুখে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে সাতটি কালো বিড়াল লিও এন্থনি লরা ক্যামিল ফ্রাঙ্কোয়েস হেনরি আর  জিনি গাড়ির গতিতে তাদের শরীর কেঁপে উঠছে

টম সন্ডার্স আবার নিজের কাজে মন দিল তীব্র গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে হেঁকে বলে উঠল ‘লিও এন্থনি লরা ক্যামিল ফ্রাঙ্কোয়েস হেনরি আর  জিনি আজ থেকে শুধু  মাদাম কোলেটের সন্তান নয় টম সন্ডার্সেরও সন্তান দেখি কে ওদের আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয় ?’

Nila Banerjee

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Others Episodes