বাইরে পা

বাইরে পা

রাজশ্রী সেন

 

তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও? ম্যামেদের এই প্রশ্নের উত্তরে রুপাই কখনো ভাইকিং হতে চাইত, কখনো শিকারি কখনো ডুবুরি, আবার কখনো বা ট্রেজারহান্টার। পাড়ার মাঠে বিকেলে খেলার সময় গল্পদাদুর মুখে যেমন যেমন গল্প শুনতো, তেমনি তেমনি তার ইচ্ছেগুলো উড়ে উড়ে বেড়াতো। তবে হাতে পায়ে দুরন্ত রুপাইয়ের  সবকটা ‘বড় হয়ে ওঠার ইচ্ছাই’ অ্যাডভেঞ্চারাস হতে হতো। ছোটবেলা থেকেই বড় দামাল সে,দু’দণ্ড তাকে ঘরের মধ্যে বা একজায়গায় আটকে রাখা যেত না। সারাক্ষন বাড়ির বাইরে হইহই করতেই তার আনন্দ বেশি। এই পাঁচিল টপকাচ্ছে তো ওই গাছ বাইছে।এই খেলতে দিয়ে বল ছুঁড়ে কাঁচ ভাঙছে তো ওই সাইকেল নিয়ে চরকিপাক খাচ্ছে। স্কুলেও সারাক্ষন দুষ্টুমি করতেই তার দিন চলে যেত। এই দস্যি মেয়ে বড় হয়ে যে কি হবে তাই নিয়ে বড়ই দুশ্চিন্তায় থাকতেন রুপাইয়ের মা।
অন্যদিকে তার ছোটবেলার বন্ধু কলি ততোটাই শান্ত, অন্তরমুখী আর ঘরকুনো। যদিও রুপাইয়ের সাথে তার কথার অন্ত থাকতো না। তবু একা থাকলে সে ঘরেই তার স্বপ্ন সাজাতে ভালবাসতো।তাই তার ইচ্ছের লিস্টে ছিল টিচার, রাইটার বা বড় জোর ডিটেকটিভ হওয়া। আর সে ভালোবাসতো বই পড়তে। তবে উপায় থাকতো কই? বিকেলে বাড়ি ফিরে কলি যখন হাত মুখ ধুয়ে একটা বই নিয়ে বসবে ভাবত, ঠিক সেই সময় মূর্তিমতী এসে হিড়হিড় করে তাকে বাইরে নিয়ে আসতো। তারপর অবশ্য সারা বিকেল তাদের কথা, খেলা শেষ হতো না।

তবে একটা জিনিস দুজনেই খুব ভালোবাসত। সূর্যটা যখন পশ্চিম দিগন্তটা শেষবারের মত রাঙিয়ে দিয়ে টুপ করে ডুবে যেত মল্লিকদের বাড়ির পেছনে, তখন হাঁ করে আকাশে রঙের খেলা দেখত দুই বন্ধু। আকাশের রঙ বদলানোর সাথে সাথে পাখিদের ঘরে ফেরা, আকাশের নীলচে কালো ওড়নায় একটা দুটো করে রূপালি চুমকির ফুটে ওঠার দিকে বুঁদ হয়ে তাকিয়ে থাকতো দুজনে। তারপর বাড়ি ফিরে মায়েদের বকুনিটা প্রত্যেকদিনের রুটিনেই বরাদ্দ থাকতো। তবে পড়াশুনায় দুজনেই ভালো মেয়ে বলে বেশি অভিযোগ করার সুযোগ পেতেন না মায়েরা। আর ওদের স্কুলেও এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে জোর দিতো বলে রোজই সেই অজুহাতে বেঁচে যেত দুই বন্ধু। বাইরের দামালপনার দায়িত্বগুলো যখন সামলে দিতো রুপাই, তখন ঘরের কাজগুলো গুছিয়ে রাখত কলি। তবে বন্ধুর মধ্যে পড়ার নেশাটা ধরিয়ে দিতে পেরেছিল কলি। ওর বাবার অনেক বইয়ের থেকে কলি নিজেও যেমন পড়তো, বন্ধুকেও জোর করে পড়ার হোমওয়ার্ক দিতো সে। আর রুপাই কলির কোন কথা ফেলতে পারত না। দুজনে সেই ছোটবেলা থেকেই হরিহর-আত্মা। তাই সব দুষ্টুমির মধ্যে থেকেও সময় বার করে বই পড়েই নিত রুপাই।

আর এইভাবেই চাঁদের পাহাড় পড়ার পর থেকেই রুপাই পাহাড়কে ভালবেসে ফেললো। ঠিক করে নিল বড় হয়ে পাহাড় চড়বে সে। আর তারপর সামার ভেকেসনে কলির স্পেস নিয়ে করা প্রোজেক্টটা যখন খুব প্রশংসা পেল, কলি চুপিচুপি রুপাইকে জানালো যে সে বড় হয়ে অ্যাস্ট্রোনট হতে চায়, মহাকাশচারী হয়ে ছুঁতে চায় ওই আকাশটাকে, তার গ্রহ-তারাদের। রুপাই এই শুনে জড়িয়ে ধরেছিল বন্ধুকে। “ঊফ্, এতদিন কি যে তুই ওই সবার মত টিচার, ডাক্তার, সিঙ্গার হয়ে চাইতিস!এইবার মনে হচ্ছে আমার বন্ধু।” তারপর বুকসেল্ফে রাখা বইগুলো দেখিয়ে বলতো, “এমনিতেই তুই পড়াশুনো করতে ভালবাসিস, আমি জানি তুই ওই মোটামোটা বইগুলো পড়েই নিবি। আমি বাবা ততদিনে সারা পৃথিবীর মাথাগুলো ছুঁয়ে নেবো। আমি পাহাড় থেকে আকাশ ছোঁব, তুই আকাশ থেকে পাহাড়।“ তারপর দুই বন্ধু বিভোর হয়ে যেত তাদের ভবিষ্যতের অলীক দুনিয়ার স্বপ্নে, ভাগাভাগি করে নিত নিজেদের ইচ্ছেগুলো একে অপরের সাথে। আর দুই বন্ধু মিলে গল্পদাদুকে আকাশ আর পাহাড় নিয়ে প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার করতো।

ক্লাস সেভেনে প্রথমবার স্কুল থেকে শুশুনিয়া পাহাড় চড়ে এসে কি খুশি দুই বন্ধু! রুপাই খুশি কলিও গিয়েছিল বলে। আর কলি খুশি ওই পাহাড়ের উপর থেকে রাতের ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশের কন্সেটেলেসন্স্ দেখে। ততদিনে ওর উৎসাহ দেখে ওকে বাবা কিনে দিয়েছিলেন মহাকাশ সম্বন্ধিত অনেক বই। বারদুয়েক নিয়ে গিয়েছিলেন বিড়লা তারামণ্ডলে।আর সে একটু একটু করে চিনতে শুরু করেছিল আকাশের জগতটাকে। সেদিন রাতে ক্যাম্পফায়ারের পরে তার সদ্যলব্ধ জ্ঞানে স্কুলের সবাইকে সে কালপুরুষ চিনিয়েছিল।গল্পদাদুর মুখে শোনা লুব্ধকের গল্প শুনিয়েছিল।

সব তো ভালোই চলছিল। তারপর কি যে হোলো! ক্লাস এইটের হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার পর বেড়াতে গিয়েছিলো রুপাইরা। ফেরার পথে একটা ভয়াবহ অ্যাকসিডেন্টে রুপাইয়ের বাঁ পা ভেঙে চুরমার। চুরমার বুঝি তার সব স্বপ্নও। হসপিটালে অপারেশনের পরে জ্ঞান ফিরলে পাশে বন্ধুকে দেখে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছিল রুপাই। তখনও সে জানে না তার একটা পা হাঁটুর থেকে বাদ দিতে হয়েছে। কলির বুকটা ফেটে গেলেও রুপাইকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে ছিল সে। আর ওই একটা ঘটনা একধাক্কায় চুপ করিয়ে দিয়েছিল সারাক্ষণ বারমুখী রুপাইকে। প্রায় মাসতিনেক বিছানায় থাকার পর যেদিন সে হুইলচেয়ারে বসেছিল, সেদিন রাগের মাথায় সারা বাড়ির জিনিস ভেঙে তছনছ করছিল। তারপর কলিকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। কলি কদিন একটু বুঝি ব্যস্ত ছিল, সেরকম আসতে পারেনি বন্ধুর কাছে, সেই অভিমানে। রুপাই কান্না ভাঙ্গা গলায় বলেছিল, “চলে যা, এখন তো আমি পঙ্গু, এখন আমার কাছে কেউ আসে না, তুইও তাই আসিস না, আসতে হবে না,, চলে যা, চলে যা তুই”… আর কিছু বলার আগেই রুপাইয়ের মুখ চেপে ধরেছিল কলি। বুকে জড়িয়ে বলেছিল,”আমি না এসে থাকতে পারবো? তুই পারবি? তুই জানিস না???”

জানে, রুপাই জানে। রুপাইতো সেই সেদিন কবে থেকেই জানে।

তারপরেই কলি দেখিয়েছিল পাঁজা পাঁজা নোটস, যেগুলো সে এই কদিনে তৈরি করছিল রুপাইয়ের জন্য। আর ঘরে থাকলে চলবে না। রুপাই আবার স্কুলে যাবে যে। “আমি কি করে যাবো? আমি এই অবস্থায় কি করে যাবো? স্কুলে কত পড়া এগিয়ে গেছে, আমি পরীক্ষা দিলে পাশই করতে পারবো না”… না রুপাইয়ের কোন ওজরই খাটেনি।“
“তুই সারাজীবন এইভাবে ঘরের মধ্যে কাটাতে চাস!তুই বল, তাহলে আমি চলে যাচ্ছি”… রুপাই কোনোমতে হাত বাড়িয়ে আটকেছিল বন্ধুকে। পরের কয়েক সপ্তাহে নিজে স্কুল করে বাকি সময়টায় রুপাইকে স্কুলের বাকি পড়া করিয়েছিল কলি। সারাক্ষণ রুপাইয়ের সাথে থেকে ওকে সব কিছুতে সাহস জুগিয়েছিল। রুপাই প্রথম প্রথম স্কুলে গিয়ে আড়ষ্ট হয়ে থাকতো, বিশেষ নড়াচড়া করতে পারত না। সদাবকরমবাজ, টকেটিভ মেয়েটা একদম চুপ করে থাকতো। তখন কলি ওদের দুজনের হয়েই যেন কথা বলে দিতো । আর তখন ‘এরপর কি করবে’ এই প্রশ্নের উত্তরে যখন রুপাইয়ের গলা বুঁজে আসতো অব্যক্ত কান্নায় , কলি যেন ওকে জোর করে মনে করিয়ে দিতো। বাকিদের উত্তর দিতো, “কেন? রুপাইয়ের ইচ্ছে তো সবার জানা, ও পাহাড়ে চড়বে।“ বন্ধুদের কেউ অবাক হয়ে যেত, কেউ চুপ, আবার কেউ কেউ একটু ব্যঙ্গের হাসি হাসত। আর সবসময় বেশি কথা বলা মিশা যেদিন বলে বসলো ও কি করে পারবে? তখন সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে রুপাইয়ের হাত ধরে কলি বলেছিল, “কেন পারবে না? তোরা নিশ্চয়ই অরুণিমা সিনহার নাম শুনিস নি। শি ইজ দ্যা ফার্স্ট ফিমেল অ্যামপুটী টু ক্লাইম্ব দ্য মাউন্ট এভারেস্ট। তাই রুপাইও পারবে, আমি নিয়ে যাবো…

সেদিন বিকেলে ছাদে যখন রুপাই নিঃস্তব্ধ হয়ে বসেছিল, কলি বুঝেছিল বন্ধুর অভিমান। অপেক্ষায় ছিল রুপাইয়ের আউটবার্স্টের। “তুই সবার সামনে এইভাবে আমাকে ব্যথা দিতে পারলি? তুই জানিস না, আমি আর কোনোদিন, কোনোদিন পাহাড়ে চড়তে পারবো না! পাহাড় তো দুরের কথা, আমি নিজের পায়েই দাঁড়াতে পারবো না।“
“ চুপ কর”, প্রচণ্ড ধমকে উঠেছিল কলি। বলেছিল, “তুই চেয়ার ছেড়ে এখন ক্রাচ নিয়ে চলাফেরা করতে শুরু করেছিস। কদিন বাদে এই নতুন প্রস্থেটিক পায়ে অভ্যস্ত হয়ে যাবি। তারপর দেখব তুই নিজের পায়ে দাঁড়াস না অন্যের পায়ে। তোকে তখন বললাম না অরুনিমার কথা।“
এই বলে কলি শুনিয়েছিল ভারতের অরুণিমা সিনহা, ভরত কুমার, এইচ বি প্রভুদের গল্প যারা মনের জোরে নিজেদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে একটার পর একটা মাইলস্টোন ছুঁয়েছে।আর সুধাচন্দ্রণের গল্পতো রুপাই নিজেই জানে। আরও শুনিয়েছিল দেশ বিদেশের সেই সব পর্বতারোহীদের গল্প যারা নিজেদের সব অক্ষমতাকে অতিক্রম করে পর্বতশিখর ছুঁয়েছে। আর তারপর কলি খুব গম্ভীর হয়ে আরো বলেছিল, “nothing can stop someone from achieving his dreams except for his own inhibitions.” থরথর করে কেঁপে উঠেছিল রুপাই।
“আমি পারবো?”
“ হাঁ পারবি। পারতে তোকে হবেই, তুই আমাদের স্কুলের স্পোর্টস চ্যাম্পিয়ন, তুই পারবি না তো কে পারবে?”
রুপাই জিজ্ঞেস করেছিল, “তুই যে ক্লাসে বলিস তুই যাবি? তুই যাবি আমার সঙ্গে?” চোখের তারায় ঝকঝকে প্রত্যয় ফুটিয়ে কলি বলেছিল সেও যাবে রুপাইয়ের সাথে।
“আর তোর তারা ছোঁয়ার কি হবে?”
মিষ্টি হেসে কলির তৎক্ষণাৎ উত্তর, ” আমার তাড়া নেই।  তুই আগে পাহাড় চড়ে নে, তারপর আমি রকেট চড়ে তারা ধরতে যাবো।“

প্রথম বছরখানেক পড়াশুনার পাশাপাশি কলিই নেট ঘেঁটে লেগে ছিল রুপাইয়ের শারীরিক ক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টায়। তারপর বছরখানেকের মাথায় প্রথমবার যখন দুদিনের একটা ছোট ট্রেক করে ফিরে এলো ওরা, রুপাইয়ের বাবামা আর বাধা দেননি। সন্তানের এই সাফল্য অনেকদিন পর তাদের মুখেও হাসি ফুটিয়েছিলো। তারাও আর তাদের প্রাণবন্ত, সদাচঞ্চল সন্তানকে সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে গুমরে থাকতে দেখতে পারছিলেন না।  তাছাড়াও কলির অনমনীয় জেদের কাছে হার মেনেছিলেন দুই পরিবারই, বুঝেছিলেন এরা একে অপরের স্বপ্ন সফল করেই ছাড়বে। তিনটে বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে একটু একটু করে ডাক্তার আর ট্রেনারদের সহায়তায় রুপাই নিজেকে তৈরি করেছে। সে দার্জিলিং এর Himalayan Mountaineering Institute থেকে মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করেছে। আর বন্ধুর পাশে থাকতে কলিও সেই কোর্স করেছে।  অবশ্য কলি তার সাথে নিজের প্রিপারেশনটাও ছাড়েনি। ওর স্থির বিশ্বাস ছিল একটা বেসক্যাম্প অব্দি যেতে পারলেই  রুপাই সব কনফিডেন্স ফিরে পাবে,  তারপর নিজে নিজেই পাহাড় চরতে পারবে। আর তখন সে পাড়ি জমাবে তার ইচ্ছেপুরণের পথে।

“কলি, আমরা পেরেছি, আমি পেরেছি!!!” এভারেস্ট বেসক্যাম্পের ফাইনাল পয়েন্ট ছুঁয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কলিকে জড়িয়ে ধরে রুপাই, খুশিতে উজ্জ্বল তার চোখ মুখ।
“আমি জানতাম তুই পারবি,” গাঢ়স্বরে বলে কলি, তার গলাতেও চাপা থাকে না বন্ধুগর্ব। “এইপর থেকে তোর আসল পাহাড়চড়া শুরু হবে রুপাই”, ওকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে মশগুল কলি।
রুপাইয়ের ও আনন্দ ধরে না। নিজের এই সাফল্য, পাশাপাশি বন্ধুরও আমেরিকা পাড়ি দেওয়ার ডেট এসে গেছে। এইখান থেকে ফিরে রুপাই যখন প্রস্তুতি নেবে ওর পরবর্তী অভিযানের, তখন ফাইনালি কলি স্পেস সাইন্টিস্ট হবার জন্য পা রাখবে নাসায়।। তারপর কোন একদিন রুপাই যখন দেশের পতাকা ওড়াবে সেভেন সামিটস এর কোনো এক পাহাড়চূড়ায় তখন কলিও হয়তো রেডি হবে তার মহাকাশে পাড়ির জন্যে ।
এইসব ভাবতে ভাব নামতে গিয়েই একমুহূর্তের অন্যমনস্কতা, একটা ভুল পদক্ষেপ, আর সঙ্গেসঙ্গে হুড়মুড় করে গড়িয়ে গেল রুপাই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে।পিছন পিছন আসা কলি চিৎকার করে নেমে এলো রুপাই কে পেরিয়ে, আর একেবারে গড়িয়ে যাওয়ার আগে সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে ব্লক করে আটকাল রুপাইয়ের পতন.. কিন্ত সেই মোমেন্টামে  নিজেকে আটকাতে পারলো না ।

কলিইইই…..।। সেদিনের মতন আর একবার বুকফাটা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো রুপাইয়ের মুখ থেকে।সেদিন গড়িয়ে পড়া আর তারপরের অভিঘাতে রুপাই জ্ঞান হারিয়েছিল।তারপর জ্ঞান ফিরলে আরো একবার ভাঙ্গা শরীর, ভাঙ্গা মন নিয়ে বারমুখো রুপাই ঘরে ফিরেছে, তবে ঘরে থাকতে ভালোবাসা মেয়েটা আর ফেরেনি। সেই ঘটনার পর থেকে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছে রুপাই, একঘরে করেছে নিজেকে। প্রতিদিন নিজেকে অভিসম্পাত দেয়, শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। সারাক্ষণ একটা অণুশোচনায় দগ্ধ হয়, “আমি তো পাহাড় চড়ে নিলাম, কিন্তু কলি? কলির ইচ্ছেগুলোর কি হবে!!”

Why did you decide to go for this voyage? A voyage of no return? সাংবাদিকের প্রশ্নে সম্বিত ফেরে রুপাইয়ের।ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডটা মুঠোর মধ্যে সজোরে আঁকড়ে ধরে রুপাই।
“I am going for my friend. My friend wanted to go to the space, touch the planets and dance with the stars. I want to take my friend to her dream destination. We promised that we will help each other to achieve our dreams. Together we will write a tale of our friendship here and in space”.

মহাকাশ পাড়ি দিচ্ছে রুপাই।অভাবনীয়ভাবে একটা সুযোগ এসেছে।  “মিশন ওয়ান মার্স”। মঙ্গলগ্রহে মানব বসতি স্থাপন করা যায় কিনা সেই উদ্দেশ্যে একটা একমুখী মানব অভিযান। যারা যাবে তারা আর পৃথিবীতে ফিরতে পারবে না। আর সেই লক্ষ্যেই একটি বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা একদল প্রতিনিধিকে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দেবে লালগ্রহে। আন্তর্জাতিক স্তরে লক্ষাধিক আবেদনের মধ্যে থেকে ধাপে ধাপে স্ক্রীনিং হতে হতে যে লিস্টটা ফাইনাল হয়েছে তাতে রুপাইয়ের নাম উঠেছে। বিগত বছরখানেক বাড়ি থেকে আর এক’পাও না বেরনো, স্বেচ্ছাঘরবন্দি রুপাই শেষবারের মত ঘরের বাইরে পা রাখবে।

সেই জ্ঞান হওয়া বয়েস থেকে অভিরুপা আর কথাকলি, রুপাই আর কলি বেস্টফ্রেন্ডস্। প্রিয়বন্ধুর বাকি থাকা ইচ্ছেগুলো, তাদের দুজনের বন্ধুত্বের কথা, সারাক্ষণ একে অপরের পাশে থাকার গল্প, পরস্পরকে জীবনের পদে পদে উদ্বুদ্ধ করার গল্প রুপাই লিখবে মঙ্গলগ্রহের বুকে।কলি রুপাইকে পাহাড়ে নিয়ে গেছিলো, রুপাই কলিকে আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশে নিয়ে যাবে। এই মিশন ওয়ান মার্সের একজন ভলেন্টিয়ার হয়ে বন্ধুকে বুকে নিয়ে রুপাই পাড়ি দেবে বন্ধুর ভালবাসার জগতে। সেই কোন ছোটবেলা থেকে বন্ধুত্বের যে রূপকথাটা শুরু হয়েছিল ঘরে সেটা ওরা সম্পূর্ণ করবে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে, তাদের একসাথে স্বপ্নবোনা সুখতারায়।

রাজশ্রী সেন

পুকুরঘাট

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 thoughts on “বাইরে পা

  1. পড়লাম। সুন্দর গল্প। Inspiring.।‌‌এরকমরূপকথা তৈরি হোক না!