বিলেতে দেহাতি -তৃতীয় পর্ব

বিলেতে দেহাতি -তৃতীয় পর্ব

সুজাতা রায়

প্যারিস তো যাচ্ছি না যেন সত্তরের দশকের চম্বল চললুম ডাকু মান সিংএর সঙ্গে  দেখা করতে।চতুর্দিক থেকে চেতাবনী – সাবধান !সাবধান! প্যারিসে একটু অসতর্ক হয়েছ কি ব্যাগ -মোবাইল- ক্যামরা গায়েব।যা কাছাখোলা আমি,আমায় নিয়ে লোকজন এর দুশ্চিন্তার শেষ নেই জিনিস পত্তর তো দূর অস্ত আমিই গোটা ফিরলে হয়!সুইডেন থেকে মামাতো বোন তিতলি ফোনে প্রায় একঘন্টা ধরে ট্রেনিং দিল চোখ – কান খোলা না রাখলে কি কি হতে পারে !আমার মাথা ঝিমঝিম শুরু হলো।ওর কর্তা  যে কিনা গোটা পৃথিবী চষে ফেলা মানুষ তারও  কয়েক লাখী  ক্যামেরা এক বছরচোদ্দর কৃষ্ণাঙ্গ বালক আইফেল টাওয়ার এর তলায় হাতিয়ে নিয়েছিল প্রায় – আমি তড়বড়িয়ে বলতে গেলাম – ‘ওরে ভয় পাসনে আমার ক্যামেরাই তো নেই – যা দুপয়সা সঙ্গে ছিল সে দিয়ে তো জুতো কিনে পরে ফেলেছি – রইলো বাকি পাসপোর্ট -তা সে তো তার জাম্বাবুর বুক পকেটে – সেই বুক পকেটের ওপর থার্মাল তার ওপর আর একখানা শার্ট তার ওপর হাফ সোয়েটার তার ওপর ফুল সোয়েটার তার ওপর লেদার জ্যাকেট…. ” তিতলি আমায় থামিয়ে বললো ‘সে সব ঠিক আছে তুমি কিন্তু জাম্বাবুর কাছ ছাড়া হবে না একদম’ আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে বললুম ‘ওমা তোর জাম্বাবুও ছিনতাই হতে পারে নাকি রে’ সব উৎসাহে জল ঢেলে সে বললো -‘আজ্ঞে না পাসপোর্ট জাম্বাবুর কাছে আর  তুমি হারিয়ে গেলে পাসপোর্ট দেখাতে না পারলে প্যারিসের জেল দেখতে হবে কিন্তু!’ প্যারিসের কবিতা-ফ্যাশন -ছবি-সুগন্ধী – চুমুর সঙ্গে চোর ও যে বিখ্যাত কে জানতো!
আমাদের ভ্রমণ শুরু হলো শ্যেণ নদীর তীরে Gate of France (arc d triomphe)দিয়ে।সেখানেই প্রথম দেখা আমাদের প্যারিসের গাইড এর সঙ্গে।বাসে উঠেই ফরাসী হিন্দিতে আমাদের পরিচয় পর্ব শুরু হলো – “নমস্তে ইন্দিয়া! মে ইলিয়ানা আপ কো পারী ঘুমানেকা কাম মেরি হ্যায়।আপ মুঝে ইলিয়ানা ভি বোল শকতে হো,শ্যান্টি ভি – কিউ কি ইলিয়ানা কি মিনিং peace হ্যায়।” ঝকঝকে ইলিয়ানার হিন্দির দৌড় ঐ অবধিই কিন্তু ভাগ্যিস সে  ঝরঝর করে বাংলায় ইংরেজি বলে নৈলে তো সব আমার মাথার ওপর দিয়েই  যেতো!এরপরই  ইলিয়ানার সাবধান বাণী -“সবাই নিজের জিনিস খুব সাবধানে রাখবেন আপনি জানতেও পারবেন না কখন আপনার কাঁধ থেকে ব্যাগ আপনার হাত থেকে মোবাইল অন্যের কাঁধে চেপে পারি ছাড়িয়ে পাড়ি দিয়েছে।”একথা শুনে যখন ইলিয়ানার সততায় আমি চমকিত তখনই এলো আসল মোচড় -“আসলে আমাদের দেশ এতবেশি অভিবাসী উপদ্রুত  বিশেষ করে আফ্রিকার কালোমানুষ – আমাদের খুবই বেদনার জায়গা এটা যে আমাদের যথেষ্ট আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও  ওদের মনুষ্যপদবাচ্য করে তোলা যায় নি।কাজেই তোমাদের সাবধান করা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।” তারমানে যতো অপকর্ম সব অফরাসীদের কীর্তি অতএব কালো মানুষদের থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে হবে – আমার ঘাড়ের গোড়ায় যে ননফ্রেঞ্চ কালো মানুষটি গত সাঁইত্রিশ বছর ধরে ঘুরঘুর কচ্ছে তারে কি করি?
আমাদের গাইড ইলিয়ানা বাসে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে
পৃথিবী বিখ্যাত স্মারক সৌধগুলো মধ্যে একটি  আর্ক দি ট্রাম্ফ ।১৮০৬  সালের ১৫ই অগাস্ট নেপোলিয়নের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় অস্টারলিজ জয়ের পর এর নির্মাণ কাজ শুরু  হয়।শুধু ভিত্তি প্রস্তর তৈরী করতেই লেগে যায় দুবছর সময়।jean chalgrin আর louis-Etienne Hericart de Thury ছিলেন এর স্থপতি। ১৬৪ ফিট(পঞ্চাশ মিটার) উঁচু আর ১৪৮ ফিট(৪৫ মিটার) চওড়া আর ৭২ ফিট (২২ মিটার)গভীর এই সৌধ।ফরাসী বিপ্লবে আত্মদানকারী বিপ্লবী ও নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর  মৃত অগনিত যোদ্ধাদের নাম এই সৌধের ভিতর ও বাইরের দেওয়া১০,০০০,০০০  ফ্রাঙ্ক।এখনকার হিসেবে ৭৫মিলিয়ন ডলার।১৫ ডিসেম্বর ১৮৪০ এ নেপোলিয়নের মৃত্যুর কুড়িবছর পর যখন তাঁর দেহাবশেষ সেন্ট হেলেনা থেকে প্যারিসে আনা হয় তখন এই তোরণের নীচ দিয়েই তা Les Invalides এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।১৮৮৫ সালে ২২শে মে রাত্রে ভিক্টর হুগোর মরদেহ ও এই গেটের নীচে রাখা হয়েছিল। মর্মর পাথরে তৈরি এই সৌধের এখন সংস্কার চলছে।পাথর ঘষে মেজে পরিষ্কার করা হচ্ছে।শুনলাম চল্লিশবছর পর এই কাজ শুরু হয়েছে। এই গেটকে কেন্দ্র করেই বারোটি রাস্তা প্যারিসের বুক চিড়ে বারো দিকে ছড়িয়ে গেছে যার একটি ভূবন বিখ্যাত সাঁজেলিজে।
আর্ক দি ট্রাম্ফ
আকাশ জুড়ে চেস্টনাটের সারি।সোনালী হলুদ রোদ্দুর আর কনকনে বাতাসে তিরতির কাঁপুনি নিয়ে শুরু হলো প্যারিসে প্রথম দিন।সেই কবে দেশ এ নীরদ মজুমদার এর ‘পুনশ্চ পারী’পড়ে আমার প্রথম মনশ্চক্ষে প্যারিস দেখা।তাতে যে পারী দেখেছি আজ এতযুগ পরে তাকে কতটুকু খুঁজে পাব জানিনা – চিত্রকরের চোখের পারী আর সাদামাটা গেঁয়ো মানুষের চোখের প্যারিস  এক তো হবার নয়। অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় তিনশো সাড়ে তিনশো বছরের বাড়ি ঘর অবিকল এক রেখে এই শহর এগিয়ে চলেছে অনন্তের পথে।পুরোনো পারীর বেশিরভাগ বাড়িতেই কোনও রঙ নেই – পাথর এ তৈরী।রাস্তা থেকে সোজা উঠে গেছে চারতলা – পাঁচতলা বাড়ি।একদম ওপর তলায় পরিচারকদের থাকার ব্যবস্থা – কেননা তখন লিফ্ট ছিলো না কাজেই কষ্ট করে ওপরে ওঠার দায় আর কে নেবে?তবে ভেঙ্গে চুড়ে লিফ্ট লাগানোর দুর্মতি যে হয় নি সেই কি কম আশ্চর্য !১.২ মাইল লম্বা সাঁজেলিজে পৃথিবীর সুন্দরতম অ্যাভিনিউ এর মধ্যে একটি।এই রাস্তায় পা ছোঁয়ানোর রোমাঞ্চই আলাদা।
        
ভূবন বিখ্যাত সাঁজেলিজে।
রাস্তার দুপাশ জুড়ে  বিশ্ব বন্দিত সব ফ্যাশান হাউস – মহার্ঘ্য রেস্তোরা- অভিজাত ঘরদোর আর দুর্মূল্য সম্ভারে সাজানো দোকান পাট।সে সব জিনিস কাচের জানলার এপার দিয়ে  তাকিয়ে দেখার সৌভাগ্য টুকুই অনেক মেনে সাঁজেলিজে পেরিয়ে  এলাম।সাঁজেলিজের আভিজাত্যর পর মমার্ত যাওয়ার পথটি যেন বেঠোফেনের সিক্সথ্ সিম্ফোনির পর টুনির মা।
 
লভোনীয় সব ফ্যাশন হাউস
সেদিন রবিবার।রাস্তার মাঝ বরাবর বসেছে সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসের বাজার।গিজগিজে ভিড়।মোজা থেকে মিক্সি,ফুলদানি থেকে দাঁত খোঁচানি,ক্যামেরা থেকে কুকার,জাঙ্গিয়া থেকে জ্যাকেট কী নেই সে বাজারে!ছেলে কাঁধে বাবা,প্রেমিকের কোলে প্রেমিকা,প্যারামে চড়ে দুধের শিশু,পিঠ ব্যাগে দামড়া শিশু,কুকুর কাঁখে গিন্নী,হুইল চেয়ারে বৃদ্ধ সব্বাই ছুটছে সেই বাজারে।ওদিকে রাস্তার দুপাসে সারি সারি সেক্স শপ – সেক্স টয় শপ।বাস থেকে নেমে হাঁটা পথে চলেছি মমার্তের উদ্দেশ্যে।স্কুল বেলায় আমি N.C.C করেছিলাম সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগলো এই এত যুগ পর ঘাড় ঘুড়িয়ে বাঁয়ে মুড়িয়ে কোনও দিকে না তাকিয়ে অবিচলিত চিত্তে কদম কদম বাড়ায়ে যা – Destination Montmartre.
সেক্সটয় শপ
বাজারের ভিড়
ট্যুর কোম্পানির পতাকা হাতে টাট্টু ঘোড়ার মতো লাফাতে লাফাতে এগিয়ে চলেছে ইলিয়ানা শ্যেন দৃষ্টিতে তাঁর ওপর নজর রেখে ভিড়ের ধাক্কা বাঁচিয়ে কর্তামশাই এর করহস্তে বড়রাস্তা থেকে বাঁয়ে ঘুরতেই দূরে নীলাভ আকাশের গায়ে ভেসে উঠলো ১২শ শতাব্দীতে ষোড়শ লুই এর রাজত্বকালে নির্মিত শ্বেতশুভ্র সেক্রেড হার্ট চার্চ।রুদ্ধবাক স্তব্ধ নেত্র আমি মুগ্ধতায় ভেসে গেলাম।
শ্বেতশুভ্র সেক্রেড হার্ট চার্চ
ontmartre বা মমার্ত হলো ল্যুভর মিউজিয়াম এর পরেই প্যারিসের দ্বিতীয় মোস্ট ভিজিটেড প্লেস, যাকে হার্ট অফ প্যারিস বা আর্টিস্টিক ডিস্ট্রিক্ট অফ প্যারিস বলা হয়।২০০০ বছরের ইতিহাস বুকে নিয়ে গড়ে উঠেছে মমার্ত।সব টুকু সযত্নে আঁকড়ে নিয়ে পথ হেঁটেছে সে তাই কোচড় থেকে কিচ্ছুটি গড়িয়ে পড়েনি। ১৮৬০ সালে মমার্ত আসে প্যারিসের দখলে।প্যারিসের উচ্চতম জায়গায় অবস্থান মমার্তের।প্লাস্টার অব প্যারিস যে জিপসাম থেকে তৈরি হয় তা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আসতো মমার্তের ঐ পাহাড়  থেকেই।
     
রাস্তার ধারে ছবি আঁকছেন শিল্পীরা

ধর্মীয় কূহক! যৌনতার হাতছানি! শিল্পের সৌন্দর্য

ধর্মীয় কূহক,যৌনতার হাতছানি,শিল্পের সৌন্দর্য এই তিনের যোগফল হলো মমার্ত। montmartre নামের মধ্যেই এই অবস্হিতির পরিচয় লুকিয়ে আছে।ফরাসী ভাষায় এর মানে উঁচু জায়গা।সমতল থেকে আলাদা আলাদা আটত্রিশটা সিড়ি পথ উঠে গেছে পাহাড়ের ওপরে।প্রতিটি সিড়িপথের নাম আলাদা।দুশো বাইশটা সিড়ি ভেঙে ওপরে ওঠার সময় এবং ক্ষমতা আমাদের ছিলনা কাজেই লাইন পাতা লিফ্ট এ চড়ে দেড় মিনিটে পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের ওপর চার্চের পদতলে।
আমার সাঁইত্রিশ বছরের ননফ্রেঞ্চ সঙ্গী ও আমি
এক সময় মমার্তে পনেরোটি উইন্ডমিল ছিল আর ছিল কৃষিজীবী মানুষের বাস,ধর্মীয় চার্চ – পাদ্রী নিয়ে শান্ত নিভৃত মমার্ত কেমন করে হয়ে উঠলো আধুনিক চিত্রকলার আতুরঘর?শীতে ভীষণ শীত – গরমে ভয়ানক গরম – প্রবল জলকষ্ট সত্ত্বেও শুধুমাত্র এর গ্রাম্য সৌন্দর্য – পাহাড়ের ওপর পর্যাপ্ত আলো আর কম ভাড়ায় বাসস্হানের কারণেই সব বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদেরই পছন্দের জায়গা হয়ে উঠলো মমার্ত।ভ্যানগঘ,পিকাসো,রেনোয়া,cezanne,lautree,sisley,monet,delacroix কে নেই সেই তালিকায়? কবি বোদলেয়ার থেকে সালভাদোর দালি -অস্কার ওয়াইল্ড থেকে বালজাক সবার গন্তব্য মমার্ত।যেখানেই কবি – শিল্পী  সেখানেই অতৃপ্ত জীবন পিপাসা – অনিঃশেষ সৌন্দর্যের তৃষ্ণা -বিচিত্র যৌন চাহিদা- শেষ বিন্দু পর্যন্ত চেটেপুটে নেওয়া জীবনের সব রঙ রস।মমার্ত কে ঘিরে উনিশ শতকেই রমরমিয়ে উঠলো ক্যাবারে শো যার নিয়মিত দর্শক ভ্যানগঘ – পিকাশো থেকে রেনোয়া কে না?এখনও সেই ধারা বহতা।প্রতি মঙ্গলবার থেকে রবিবার ক্যাবারে শো প্যারিসের নৈশ জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। মমার্তের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে  এই সব বিশ্ববন্দিত শিল্পীরা কোথায় থাকতেন -কোন ক্যাফেতে আড্ডা দিতেন – কোথায় কাজ করতেন। সব অবিকল তেমনই রাখা আছে এখানেই মমার্তের অনন্যতা।পনেরোটা উইন্ডমিল অবশ্য এখন দুটিতে ঠেকেছে যা রেনোয়ার আঁকায় অমর হয়ে আছে।Moulin Rouge -ক্যাফেতে এখনো সেই উইন্ডমিল আর নাচে গানে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের পুরোনো আমেজ অবিকৃত।
বিখ্যাত Moulin Rouge
টয়ট্রেনের মতো ট্রেনে চড়ে ঘুরতে পারেন পুরো মমার্ত।ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে যাবেন ১৫৫৬ স্কোয়ার মিটার জায়গা জুড়ে ২৮রকমের প্রায় ১৯০০ আঙুর গাছের বাগানে।হেমন্ত কালে হয় আঙুর উৎসব।আঙুর তুলে ফার্মেন্টেড করে বানানো দুর্মূল্য ওয়াইন।ইশশ এ জীবনে যার স্বাদ পাওয়া হলো না -বলে আমার হা হুতাশ শুনে পথচলতি একজন কানে কানে বলে গেল “মন খারাপ কোরো না শুধু দুর্মূল্য না  অখাদ্য ও!”
মমার্ত ঘোরার ট্রেন
মমার্ত ঘুরতে ঘুরতে চমকে গেলাম একটা ভালোবাসার দেওয়াল (wall of love)দেখে। দেওয়াল জুড়ে প্রায় দুশো পঞ্চাশটি ভাষায় I love you লেখা।আমি হুমড়ি খেয়ে পরলাম “আমি তোমাকে ভালোবাসি”র খোঁজে।না পেয়ে হতাশ আমার পাশের কালো ননফ্রেঞ্চ ভদ্রলোকটি  চিৎকার করে  বলে উঠলেন – ঐ তো ঐ তো ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’।কোনওদিন নিভৃতে যা বলা হয়নি এতদিন পর মমার্তের পাহাড়ে তা বলা হলো প্রসঙ্গ যাই হোক না কেন!
দেখুন তো ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ খুঁজে পান কিনা
আজকের হাজার হাজার ট্যুরিষ্ট লাঞ্ছিত মমার্তে সেই শান্ত সমাহিত পাহাড়ি গ্রামটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না সত্যি।কিন্তু রাস্তার দুধারে অজস্র ক্যাফে – রেস্তোরা -দোকান পাট,অগনিত স্টুডিও – মিউজিয়াম শত প্রলোভন এর লাখো হাতছানির  মধ্যেও দেখবেন পথের ধারে তুলি হাতে নিমগ্ন শিল্পী কেমন নিবিষ্ট চিত্তে ছবি এঁকে চলেছে – আপনি দাঁড়িয়ে দেখুন,ছবি তুলুন সে কিন্তু পলকের তরেও চোখ তুলে চাইবে না।কয়েক ফ্রাঙ্ক এর বিনিময়ে আপনিও আপনার ছবি আঁকিয়ে নিতে পারেন।চার্চ এর চাতালে কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসী ছেলেটি যখন  গিটার বুকে মাথা ঝাঁকিয়ে ফরাসী ভাষায় গান  ধরবে আপনি সব সন্দেহ ভুলে,ভাষার প্রাচীর টপকে চার্চের সিড়িতে বসে পরবেন, চাই কি ব্যাগ হাতড়ে একটা ইউরোও দিয়ে আসবেন ওর টুপিতে – বিশ্বাস করুন এই সব সম্ভব মমার্তে।ইলিয়ানার ইশারায় ফেরার পথ ধরলাম।লিফ্টের কাছে আসতেই দেখি এক শ্বেতাঙ্গ বাদক  এ সুর ধরেছে,সুর টা কী অসম্ভব চেনা চেনা লাগছে না?ওহ্ হরি এতো আমাদের জন্মের আগেকার গান – “অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল জিনা ইহা যারা হটকে যারা বাঁচকে ইয়ে হ্যায় বম্বে মেরি জান”। দ্যাখো কাণ্ড আমাদের কবেকার গান ওরা এতদিনে টুকছে! হায় ভগবান!
আমাদের চেনা সুর বাজচ্ছে ফরাসি দেশে
সুজাতা রায়
পুকুরঘাট

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 thoughts on “বিলেতে দেহাতি -তৃতীয় পর্ব

  1. এমন সরস তোমার ভ্রমণ কাহিনী যে চোখ তোলা যায় না। এবার গিয়ে তোমার কাছে “বাংলায় ইংরেজি” শুনব। স্যারকে নন ফ্রেঞ্চ কালো মানুষ বলেছ এক নম্বর কাটা গেল….

  2. সবগুলো পড়লাম। আমি তোমাকে ভালবাসি খুঁজে পেলাম। লেখকের জন্যও ঐ একই কথা। এতো প্রাঞ্জল আর এতো সেন্স অব হিউমার!

  3. খুব ভালো লাগলো। তার সাথে ছবি গুলো দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমাদেরও প্যারিস ঘোরা হল।

  4. ভালো লাগছে বিলেতে দেহাতি।

  5. চমৎকার! আগামী পর্বের আশায় রইলাম

  6. ঝরঝরে ভাষায় ঝকঝকে লেখা, পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায়।

  7. খুব ভালো লাগলো। প্যারিস যাওয়ার ইচ্ছে দ্বিগুণ হয়ে উঠলো।পরের পর্বের অপেক্ষায়।

  8. নেশা লেগে যাচ্ছে পড়তে পড়তে. আপনার লেখার মধ্যে দিয়ে মানস ভ্রমণ হয়ে যাচ্ছে.
    আর momarta r কথা পড়তে পড়তে চ ম কে
    উঠলাম. আমার Jethur লেখা তে পড়েছিলাম এর বিবরণ. PARIS এ থাকা র সময় ওখানে একসময় ছবি আঁকতো Jethu o. নিশ্চই এর পর Luvour Museum er কথা ও লিখবেন , সেই অপেক্ষায় রইলাম.

preload imagepreload image