চার পর্বের গল্প/ মহেঞ্জদারো-সুতা/ পর্ব ২- প্রতিভা সরকার

চার পর্বের গল্প/ মহেঞ্জদারো-সুতা/ পর্ব ২- প্রতিভা সরকার

মহেঞ্জদারো-সুতা

প্রতিভা সরকার

ভারতের ম্যাপে বাঁদিকে অঞ্জলিবদ্ধ হাতের মতো যে ভূখন্ডটুকু আলতো বেরিয়ে আছে, তার ঠিক ওপরের ঝুলন্ত মৃত্তিকাখন্ডের নাম কচ্ছ। এই দু টুকরো ভূখন্ডকে আলাদা করেছে আরব সাগরের জলোচ্ছ্বাস। ম্যাপ নিয়ে বসলে পরিষ্কার দেখা যায় ঝুলে থাকা এই দুই ভূখন্ডের ফাঁকফোকর দিয়ে অনেকদূর অব্দি চলে গেছে নীল জলের ধারা। ওইই হল কচ্ছের উপসাগরীয় অঞ্চল। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি, সবার ওপরে মাইলের পর মাইল শুকিয়ে সাদা হয়ে যাওয়া নুনের  সমুদ্র আর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে অনন্য কচ্ছ। সেই কোন প্রাচীন কালে এর বিস্তীর্ণ অঞ্চল নগর সভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল, এখান থেকেই বিশাল বিশাল পাল টানা পোতের বহর চলে যেত দূর দেশবিদেশে। এর থেকে বেশি পুরান সংগঠিত মানব সভ্যতার নিদর্শন এই উপমহাদেশে আজও অনাবিষ্কৃত।

 

এই নিয়ে স্কুলে পড়ার সময় রাজেশ কোলির খুব গর্ব ছিল। সুযোগ পেলেই অপরিচিতকে শুনিয়ে দিত,আমি একজন কচ্ছি, কচ্ছের অধিবাসী। যেন সেইই কচ্ছের রাজা এমন গর্ব প্রচ্ছন্ন থাকত তার কন্ঠস্বরে। আসলে গণতন্ত্রে সবাই রাজা, সেখানে জাত ধর্ম বর্ণের কোনো ফারাকই গ্রহণযোগ্য নয়, এই রকম ভুল ধারনা তার মাথায় ঢুকে বসে ছিল বহুকাল, অনেক দাম দিয়ে তবে সেসব ভুতের কেত্তন বন্ধ হয়েছে। এখন রাজেশ জানে নাম বা শিক্ষা তার যাইই হোক না কেন, উচ্চ বর্ণের লোক তাকে দাসানুদাস হিসেবেই দেখতে পছন্দ করবে। নাহলে ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরতে আসা কিছু উচ্চবর্গের পর্যটকদের মনে প্রসারতার এত অভাব যে তারা ঘুরে বেড়াবার সময় ব্রাহ্মণ গাইড চায় ! তাদের দেখাদেখি নীল স্কার্ফ গলায় বাঁধা দলিত পর্যটকেরা বৌদ্ধ গাইডের খোঁজ করে! তবে দ্বিতীয় দলেরা সংখ্যায় খুব কম আর গুজরাতের এই প্রত্যন্ত গ্রামে আঁতিপাতি করে খুঁজলেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কাউকে  পাওয়া যাবে না। দেখেশুনে রাজেশের দৃঢ় বিশ্বাস, আর কিছুদিনের মধ্যে গোটা দেশেই জাতপাতের লড়াই আরও জমে উঠবে তারপর ছড়িয়ে যাবে আরব সাগরের ওপারে অন্য অন্য দেশে। হরাপ্পা সভ্যতার মতোই হারিয়ে যাবে আধুনিক মানব বিশ্ব। হরাপ্পা মহেঞ্জোদারোর পতন যদি হয়ে থাকে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বাইরের শত্রুর আক্রমণের জন্য, তাহলে আমাদের জন্য তো রয়েইছে করোনার মতো আরও অজস্র অতিমারি,পরিবেশের অপূরণীয় দূষণ আর মারণাস্ত্রের ব্যবহার।

 

 শিউরে ওঠে রাজেশ। আসন্ন ধ্বংসের অনিবার্য ছবি যেন তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মহেঞ্জোদারোর মতো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে দিল্লি, প্যারিস, নিউ ইয়র্কের অবশিষ্টাংশ। শুধু রাজেশ কোলির মতো কোনো গাইড বেঁচে নেই, নেই কোনো জীবিত ট্যুরিস্টও। গোটা পৃথিবীটার নামই তখন হয়ে গেছে মহেঞ্জোদারো বা মৃতের সমাধি। হয়ত গ্রহান্তরের মানুষ তখন একদা নীল এই গ্রহকে এই নামেই চেনে।

 

তবু সুন্দরী কচ্ছ উপসাগরীয় এলাকাকে চিনতে বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে প্রায়ই বেরিয়ে পড়ে রাজেশ। ফ্লেমিঙ্গো আর পেলিক্যানদের কলোনি পেরিয়ে ছুটে যায় যেখানে উপসাগরের নীল জল থেকে মাথা তুলেছে বাবলাকাঁটার গাছে ঢাকা ছোট ছোট পাহাড়। বেশির ভাগ তটভূমিই সাদা, যেন বরফ পড়েছে। আসলে ওগুলো জমে থাকা নুন। সমুদ্রের অগভীর জল প্রখর রোদের তাপে শুকিয়ে লবণ হয়ে গেছে। ্কত রাত তারা কাটিয়েছে কচ্ছের রান এলাকায়, চাঁদের আলোয় নুনের সমুদ্র কেমন লাগে  তা দেখতে।

 

তার বন্ধু হীরাভাইয়ের পড়াশুনো বেশিদূর অবদি এগোয়নি। সে একদিন জোছনা রাতে রাজেশের হাত চেপে ধরেছিল, ঐ দ্যাখ ওটা কী !

চমকে উঠে রাজেশ দ্যাখে বরফের মতো জমা নুনের সৈকতের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে আবছা কয়েক জোড়া ডানার ছায়া। হুরি পরি না জিন ব্রহ্মদত্যি ! তাদের প্রাণের বন্ধু আহমদ সবার আগে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, শালে ডরপোকের দল, ফ্লেমিঙ্গোর ঝাঁককে বলে হুরি পরি !

সত্যি ওটা ফ্লেমিঙ্গোর ঝাঁকই ছিল, বিশাল পাখিগুলো শিকারির তাড়া খেয়ে বা অন্য কোন তাড়নায় চাঁদের ছায়ায় অন্তহীন উপসাগরীয় বিস্তার পাড়ি দিচ্ছিল। সে যে কী দৃশ্য! যেন স্বপ্নে দেখা স্বর্গ!

 কিন্তু এখন রাজেশের বুক চিরে বেরিয়ে আসে লম্বা দীর্ঘশ্বাস। একুশ শতকের দোরগোড়ায় এসে কচ্ছ অঞ্চলে দুই ধর্মের লোকেদের গ্রাম বসত সব সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। গ্রামে তো বটেই এমন কী আমেদাবাদের মতো শহরেও মহল্লা পুরো আলাদা। এখন আহমেদের সঙ্গে দেখা হলে কী রে কেমন আছিসের বেশি কথা এগোয় না। একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর প্রশ্নই নেই।

 

হীরাভাইয়ের মনে কোনো প্রশ্ন জাগলেই সে ছুটে আসত রাজেশের কাছে। সত্যিই তার বন্ধুর মতো শিক্ষিত ভালো মনের ছেলে খাদির বেট গ্রামে বিরল। একদিন হীরা বলল, দ্যাখ রাজেশ, অন্য সমুদ্রের ধারে তো কই এত নুন পড়ে থাকে না। কচ্ছের রানে কেন এমন হয়?

সেদিনও জোছনা রাত ছিল। ঢোলাভিরা ধ্বংসস্তূপের একেবারে সামনে শুকনো নদীখাতের ওপর বসে ছিল দুই বন্ধু। শন শন করে হাওয়া চলছিল। এমন তার শব্দ,পাশের লোকের কথা শোনাও দায়। হীরার কানের কাছে মুখ নিয়ে রাজেশ বোঝায়, আসলে কচ্ছ উপসাগর অনেককাল আগে আরব সাগরেরই অংশ ছিল। হয়ত ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে কোনো বাধার সৃষ্টি হয়ে এই উপসাগর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জমা জল ধারের দিকে অগভীর অংশে শুকিয়ে নুন হয়ে যায়। তাইই চলতে থাকে কারণ জোয়ার বা অন্য জলস্ফীতির সময়ে সমুদ্র থেকে এই অংশে উপচে আসে যে লবণাক্ত ঢেউ, মাঝখানের বাধার কারণে তা আর ফিরে যেতে পারে না। অনন্তকাল ধরে সৈকতে অফুরন্ত নুনের ভান্ডার গড়ে উঠতে থাকে।

চাঁদের আলোয় হীরার চোখ চকচক করে। সে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়, রাজু, চল, এখনই লিটল রানে যাই। তুই জানিস ওখানে রাতে আমাদের পূর্বপুরুষের আত্মা আলো হয়ে ঘুরে বেড়ায়। চল দেখে আসি।

রাজেশ তার প্যান্টের ঝুল ধরে টানে, আরে পাগলা চাঁদনি রাতে কিসের আলো দেখবি তুই। বোস চুপ করে। আয়, আজ আমি তোকে সেই আলোর গল্প বলি।

 

এই ঘুরে বেড়াবার নেশাতেই ত্রিশ পেরিয়ে গেলেও রাজেশ বিয়ে করেনি। পাছে পেট্রোল কেনার টাকা কম পড়ে, তাই। পাছে কাউকে জবাবদিহি করতে হয়! সত্যি সত্যি কাউকে না বলে কয়ে এক শীতের সকালে রওনা হয়ে সে হীরা আর আহমদকে নিয়ে পৌঁছে গেল লিটল রানে। তখন অমাবস্যার ঘুটঘুটে রাত, সাদা পাহাড়ের মতো ডাঁই করে রাখা নুনের ঢিবিও যেন গায়েব হয়ে গেছে সেই অন্ধকারে। সেখান থেকে ভূমিকম্পে গতিপথ বদলানো সিন্ধু নদীর শুকনো খাতের ধারে বান্নি গ্র‍্যাসল্যান্ড। একটি মাত্র চায়ের দোকানে কেরোসিনের মিটমিটে আলো নিবিয়ে দোকানী ঘরে ফেরবার তোড়জোর করছিল, শুকনো মুখের তিনটে ছেলেকে বাইকে চড়ে গুটি গুটি দোকানের দিকে আসতে দেখে আবার স্টোভে গরমজল চাপাল। খাকরার গোল প্যাকেট কাটল একটা। কোথায় থাকবেন আপনারা, দোকানীর এই প্রশ্নের উত্তরে তিন বন্ধু মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। তারা তো চির বাত্তি বা ভৌতিক আলো দেখবে বলে এসেছে, থাকার জায়গা দিয়ে কী হবে! শুকনো নুনের ওপর চট বিছিয়ে বসে থাকলেই হবে’খন।

 

দোকানী তো অবাক। এই ঠান্ডার রাতে ছেলেগুলো বাইরে বসে থাকবে! খানিক দূরেই অবশ্য রানের নুনসাগর। এখানে সূর্যাস্ত হয় অনেক দেরিতে, সূর্যোদয়ও তাই। যত রাত বাড়ে তত ঠান্ডা হতে থাকে চরাচর। আকাশ থেকে আর সমুদ্রের দিক থেকে ছুটে আসতে থাকে কনকনে হাওয়া। সেই শুকনো হাওয়ায় চড়াৎ শব্দে ফাটতে থাকে নুনের চাঙড়, বেরিয়ে আসে নীচের ঠান্ডা জল। ফাটলগুলো থেকে সাদা ধোঁয়ার মতো বাষ্প বেরোয় ভকভক করে, যেন আগ্নেয়গিরি খোলা পেটের ভেতর থেকে একটু পরেই উগরে দেবে উজ্জ্বল কমলা রঙের লাভা। কিন্তু লাভার বদলে কুয়াশা আর বাষ্পের ভারী পর্দা ভেদ করে কাছে দূরে তারা ফোটার মতো জ্বলে উঠতে থাকে একটা দুটো আলো। ক্রমে সেগুলো অসংখ্য হয়ে যায়। কপাল ভালো যাদের একমাত্র সেই নসিবদাররাই দেখতে পায় সেই অপার্থিব আলো, স্থানীয় লোকেরা যাকে বলে চির বাত্তি। অন্যেরা তখন বুঙ্গা নামের গোল ছাদওয়ালা ঘরে শুয়ে চারটের ওপর  পাঁচ নম্বর কাঁথাটি চাপায়।

 

সেবার বাত্তি না দেখেই ফিরতে হয়েছিল রাজেশদের। সদাশয় দোকানীর দেওয়া চটের বস্তা পেতে রানে বসে থেকে সারা রাত কেঁপেঝেপেও কোনো আলো ফালো দেখতে পায়নি তারা তিন বন্ধু। কিন্তু প্রকৃতির কাছে গেলে তো কেউ খালি হাতে ফেরে না। মাঠের আলো দেখতে না পাবার শোক মিটিয়ে দিয়েছিল আকাশের আলো। এক এক প্রহরে এক এক রঙ ফুটে উঠছিল আকাশের গায়ে। তারপর তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছিল নীচের লবণ-মরুভূমিতে। আর তারা খসার সে কী ধুম!  যেন শাড়ি থেকে সব চুমকি খসিয়ে দেবে ভোরের আগেই এই প্রতিজ্ঞা করেছিল কোনো অপ্সরা। মন ভরে গিয়েছিল রাজেশ আর তার বন্ধুদের। প্রবল শীতে একটুও কাবু না হয়ে তারা ভোর হতেই চলে আসা সদাশয় দোকানীর হাত থেকে নেওয়া গরম চা প্লেটে ঢেলে সুপ সুপ করে খেল। তারপর স্টার্ট দিল বাইকে। রাজেশের পেছনে হীরাভাই। আরেকটি বাইকে আহমদ একা।

 

কিন্তু সে তো অনেকদিন আগের কথা। আজ রাকুলকে নিয়ে প্রাচীন  সমাধিতে যাবার সময় হঠাত লিটল রানের বান্নি গ্রাসল্যান্ড তার স্মৃতিতে কেন ফিরে এল, তাই ভেবে বেশ অবাক হল রাজেশ। আসলে বেজায় রহস্যময় এই মেয়ে আর নির্জন রাস্তায় ঘন হয়ে গজানো বেঁটে বেঁটে বাবলা গাছের ভেতর দিয়ে ছুটে যাওয়া হাওয়ার শনশন তাকে কেমন যেন বেভুল করে দিয়েছে। কেবলই মনে পড়ছে গোটা কচ্ছে ঘুরে বেড়াবার কথা। ওদিকে লোথালের প্রাচীন সমুদ্র বন্দর, এদিকে মান্ডবীর রুকমাবতী নদীর রোগা শরীর বোঝাই বিশাল বিশাল জাহাজি নৌকা, ওখানকার ভাষায় যাদের বলে ধাও। যেন রেডি হয়েই আছে, জোয়ার এলেই ভেসে পড়বে সব লেনাদেনা চুকিয়ে। রাজেশ নিজেও যেন তাই। ডাক এলেই নিজেকে নিয়ে উধাও হয়ে যাবে।

 

সরু পথে বাবলার কাঁটা ভর্তি ডাল হাত দিয়ে তুলে ধরছিল রাজেশ। পথ সুগম করে দিচ্ছিল রাকুলের জন্য। একজন কচ্ছির সহজাত সৌজন্যবোধ ছাড়া আর কিছু ছিল না তাতে। কিন্তু তা করার সময় প্রত্যেক বার রাকুল এমনভাবে তাকাচ্ছিল যে রাজেশের কান ঝাঁ ঝাঁ করছিল। যেন তার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না মেয়েটি। অনেক দিন পরে হারিয়ে ফেলা খুব কাছের মানুষকে খুঁজে পেলে যেমন হয়, তেমন এক আনন্দ, খুশির আভা রাকুলের অসাধারণ সুন্দর মুখে। তার এই বিহবলতায় খুবই বিব্রত বোধ করছিল রাজেশ, কারণ সে ভালো করেই জানে, তার এই সাদামাটা জীবনে কোনোদিন রাকুলের ছায়াও পড়েনি, পড়বেও না।

 

প্রাচীন শহরের একেবারে পশ্চিমে প্রায় ৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে এই সমাধি ক্ষেত্র। দু কিলোমিটারের ওপরে হলুদ ঘাসে ছাওয়া রাস্তা রাকুল অক্লেশে হেঁটে চলে এল। সমাধির কাছাকাছি যখন তারা, রাজেশ দেখল বুনো কুল গাছ লাল টুকটুকে ফলে রাঙা হয়ে আছে। এগুলো খেলে জলতেষ্টা কম পায়। অতিথির কষ্ট লাঘব করতে মুঠো ভরা কুল ছিঁড়ে নেয় রাজেশ। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাকুল দেখছিল, এবার কুল নিয়ে রাজেশকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে হঠাত সে বিচিত্র ভঙ্গিতে ডান পা মুড়ে বাঁ পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ে। দুই হাত অঞ্জলির মতো তুলে দেয়, দু চোখ তার জলে ভেসে যাচ্ছে, যেন কুল নয় ওগুলো, মহামূল্য চুণি পান্না হিরে!  বিড়বিড় করে সে বলতে থাকে, ইউ স্টিল রিমেম্বার মেন্ড্রা, তোমার এখনও মনে আছে! তুমি আর জাকুস আমার সব পছন্দ অপছন্দ জানতে।

 

রাজেশ কুলগুলো তার দুহাতের পাতায় ঢেলে দিল বটে, কিন্তু এর মধ্যে অসাধারণ কী আছে বুঝে উঠতে  পারল না। রাকুল এবার উঠে দাঁড়িয়ে নাক ডুবিয়ে দিল হাত ভর্তি কুলের মধ্যে, বিড়বিড় করে বলল, আহা সেই গন্ধ, সেই টেস্ট!  চোখ ভর্তি জল নিয়েও সে হাসছিল, কৃতজ্ঞতার চাউনি ছুঁয়ে যাচ্ছিল রাজেশের সর্বাঙ্গ। রাকুল বলে উঠল, আমি যে এই বেরিগুলো খেতে ভীষণ ভালবাসতাম।

 তাই জাকুস লুকিয়ে লুকিয়ে সিটাডেলের প্রহরী তোমার হাত দিয়ে এই ফলগুলো পাঠাত আমার কাছে, একথা পাঁচ হাজার বছর পরেও তুমি ভোলনি মেন্ড্রা! স্ট্রেঞ্জ, ভেরি স্ট্রেঞ্জ!

এগিয়ে আসে সে রাজেশের বুকের কাছাকাছি। একটি কুল তুলে ধরে তার ঠোঁটের কাছে, খাও মেন্ড্রা, আমার হাত থেকে খাও। আস্তে আস্তে তোমার সব মনে পড়ে যাবে। আমি যে তোমার বন্ধু লোকা, আর এক বন্ধু জাকুসের প্রণয়িনী। কী করে ভুলতে পার তুমি আমাকে!

ম্যাডামের স্বামী কেন গাড়িতে বসে রইল, তাদের সঙ্গে কেন এল না, এই গজগজানিতে ফেটে পড়তে গিয়েও রাজেশ আলতো করে কুলটা নিয়ে নিল দাঁতের ফাঁকে। এই পাগল মহিলাকে আরও খেপিয়ে দিয়ে লাভ নেই। মাথা শান্ত রাখার চেষ্টা করে রাজেশ। ধূ ধূ প্রান্তরের মধ্য দিয়ে গম্ভীর ভাবে এগিয়ে যেতে থাকে সমাধি ক্ষেত্রের দিকে। তাকে অন্ধের মতো অনুসরণ করে রাকুল,পরম তৃপ্তিতে চিবোতে থাকে ছোট ছোট বুনো কুলগুলো। যেন পাঁচ হাজার বছর আগে নিহত জাকুসই তার জন্য আর এক বন্ধুর হাতে এই টক মিষ্টি বুনো ফলগুলোকে পাঠিয়েছে কোনো অলৌকিক উপায়ে!

 ( ক্রমশ)

Nila Banerjee

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

One thought on “চার পর্বের গল্প/ মহেঞ্জদারো-সুতা/ পর্ব ২- প্রতিভা সরকার

  1. এ লেখা পড়ে কী মন্তব্য করব!
    মুগ্ধ।
    এ নীল গ্রহ শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস বুকে এখনও আছে,,তবে রাজেশের মতো ভয় লাগে সবসময়

Others Episodes