কবিতার মতো

কবিতার মতো

শুভঙ্কর দে (অপু)

‘শালিমার’ নামটা ছোটবেলা থেকে নারকেল তেলের কৌটোর ওপরেই দেখে এসেছি। রেল স্টেশনেরও যে এমন একটা নামকরণ হয়েছে তা জেনেছি অনেক পরে। দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরোলেই শালিমার স্টেশন। বৃষ্টিভেজা কলকাতার রাস্তায় ভোরবেলায় হেঁটে ট্যাক্সি ধরলাম বহুদিন পরে। স্যাঁৎসেঁতে জোলো হওয়ায় রাস্তা ভেজা সোঁদা গন্ধ ভেসে আসে। ট্যাক্সি ছুটে চলে হুগলি সেতুর ওপর। দিকনির্দেশ করা, তিরচিহ্ন দেওয়া শালিমার স্টেশন যেতে গিয়ে আটকে পড়লাম রেল গেটে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা টোটোচালক বললেন, এই রেল গেট এক-দেড় ঘণ্টার আগে খুলবে না। ভাগ্যিস বললেন! নয়তো, তিমিরের আমন্ত্রণে ‘আরণ্যক’ ট্রেন আমায় শহরে রেখে সে-অরণ্যে চলে যেত, আর আমার এই প্রথম শালিমার স্টেশন ছাড়া কিছুই দেখা হত না।

সকাল সওয়া দশটার আগে বিষ্ণুপুরের আকাশ নাকি কালো মেঘে ঢাকা ছিল। অমরদা গাড়ি চালাতে চালাতে তুলসীদাকে বললেন, “বলেছিলাম, উৎসব হবে, বৃষ্টি হবে না।” তুলসীদার কথা, “কবিতা যে শুভ, আর শুভকাজে বাধা পড়ে না।” গাড়ির মধ্যে এমনই কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কখন যে বিষ্ণুপুরের উদয়ন লজে ঢুকে পড়েছি বুঝতে পারিনি। আজ, ১৪ অক্টোবর ‘বাঁকুড়া কবিতা উৎসব’-এর পঞ্চম বর্ষ। তরুণ তুর্কিদের আয়োজনে কোনও খামতি ছিল না। অমর মিত্র, রামকুমার মুখোপাধ্যায়, মৃদুল দাশগুপ্ত — এঁদের পাশাপাশি গৌতম চৌধুরী, শ্যমলবরণ সাহা, শুভাশিস ভাদুড়ী, গৌতম মণ্ডল, সকাল এগারোটার সময় উদয়ন লজের করিডর তখন কলরবে মেতেছে।

কবিতা উৎসব

বিষ্ণুপুরের বাংলার দুই প্রাচীন মন্দিরের সামনে কবিতা উৎসবের জন্যে মুক্তমঞ্চ সজ্জিত। স্বপন চক্রবর্তীর মঞ্চ সজ্জা কবিতা উৎসবের বীজ বপন করে। আর সেই বীজে অঙ্কুরোদগম ঘটে দশ বছরের এক বালকের বিষ্ণুপুর ঘরানার উদ্বোধনী সংগীতের মধ্যে দিয়ে। শঙ্খ ঘোষ, বিকাশ দাস ও প্রভাত চোধুরীর স্মরণে তৈরি মঞ্চে বাঁকুড়ার গামছা গলায় রেখে, মঞ্চে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাত বাড়িয়ে হাতের উপর হাত রেখে, শঙ্খধ্বনির সঙ্গে বাঁকুড়া কবিতা উৎসবের শুভ সূচনা হয়। অনেকটা এরকম, কবিতাকে ভালোবেসে ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’।

রোদের তেজ নরম হয়ে আসে। সাহিত্যিক রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের উদ্বোধনী ভাষণে ছিল গভীরতার সঙ্গে মজা মেশানো। কবিতা নির্জনতা চায়। তার শ্রোতা যেমন আমরা, তেমনই আকাশ, পাখি, গাছপালা। আর এই ‘বাঁকুড়া কবিতা উৎসব’ আমাদের সবার যাঁরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন আর যাঁরা বিয়ার খেয়ে লজে বিশ্রাম নিচ্ছেন তাঁদের সবাই এই কবিতা উৎসবের অংশ।

অভিমন্যু মাহাতো, অভ্র গোস্বামী, পলাশ চট্টোপাধ্যায়, নিত্যানন্দ দত্ত, তুলসীদাস মাইতি, তিমিরকান্তি ঘোষ, পলাশ গোস্বামী ও জয়দেব বাউরি। অষ্টবসুর ভালবাসা আর আন্তরিক চেষ্টার ফসল ‘বাঁকুড়া কবিতা উৎসব’। পৃথ্বী, আকাশ, শুভদীপ, সম্রাজ্ঞী, কস্তুরী, মৌমিতা, দেবাশীষদা, অংশুমানদা আরও অনেককে নিয়ে কেমন হইহই করে পুরো দিনটা কেটে গেল।
–পৃথ্বী চল লালবাঁধ পর্যন্ত হেঁটে আসি।
তখন রাত প্রায় বারোটা। আকাশও যুক্ত হল। রাত্রি পুলিশের সাবধান বাণী, “ওদিকটায় অন্ধকার, সাবধানে যাবেন, সাপ আছে প্রচুর”। খানিকটা এগোনোর পরে চার-পাঁচটা কুকুর শুয়ে আছে। পৃথ্বী বলে,
–এখানে তো সাপ কুকুর কিছুই বাদ নেই।
–তোমার কুকুরেও ভয়?
–যে তাড়া করে, আমার তাকেই ভয়। ফিরে চলো অপুদা।

দ্বিতীয় দিন
সারাদিন কবিসঙ্গ, কবিতা যাপনের পরে মন কেমন ভবা পাগলের মতন ঘুরে বেড়াতে চাইল। বিষ্ণুপুরে কবিতার সঙ্গে রাত্রিযাপন করে সাত সকালেই স্টেশনে হাজির ‘রূপসী বাংলা’ পুরুলিয়া এক্সপ্রেস ধরতে। দেড় ঘণ্টায় আদ্রা। আদ্রা থেকে ‘হীরক রাজার দেশে’। সেই সত্যজিতে আটকে পড়া। আসলে আমাদের রবীন্দ্রনাথে শুরু আর সত্যজিতে শেষ। ‘হীরক রাজার দেশে’ শুটিংয়ের সেই ‘জয়চণ্ডী পাহাড়’। এবারের আস্তানা আমার সেই পাহাড়ের কোলে। দেড়শো টাকায় হওয়া খাওয়াতে খাওয়াতে টোটো লালমাটির মাঠঘাট পেরিয়ে নিয়ে চলে এল পাহাড়ের কোলে যুব আবাসনে।

রুম নম্বর ৩০৯। এমন শুনলে নাকে কেমন একটা রোমাঞ্চ-রহস্য গন্ধ লাগে। দীর্ঘদিন ঝাঁট না পড়া ধুলোমাখা প্রায় আশিটা সিঁড়ি পেরিয়ে চারতলায় বিশাল আকৃতির সেই রহস্যময় রুম। আমার একার জন্যে পেল্লাই সাইজের তিনটে সোফা পাতানো ডাইনিং রুম সঙ্গে ছোট একটা বাথরুম। ডাইনিংয়ের পরেই আমার ঘুমানোর ঘর সেখানেও বাথরুম। শোয়ার ঘরের আলাদা একটা দরজা খুলে বিশাল ব্যালকনি। সঙ্গে আবার একটা বাথরুম। মনে মনে ভাবলাম কত লিটার জল খেলে তিনটে বাথরুমই ব্যবহার করতে পারি! বারান্দায় বাথরুম ছাড়াও রয়েছে দারুণ দুটো দোলনা। দোলনায় বসলেই সামনে জয়চণ্ডী পাহাড়। দোলনায় বসে সময় কেটে যাবে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে। জয়চণ্ডীর পাথুরে কঠিন চেহারায় অদ্ভুত এক সরলতা আছে। সেই সরলতার টানে প্রদক্ষিণ করি জয়চণ্ডী পাহাড়।

জয়চন্ডী

যুব আবাসনে খাবার কিছু পাওয়া যায় না। ফোন নম্বর পাওয়া যায়। যে নম্বরে ফোন করলে খাবার পাওয়া যাবে। ফোন করে জানতে চাইলাম, দুপুরে কী পাওয়া যাবে, উত্তরে– মাছের ঝোল ভাত। একা শুনে বলল, পাঁচ সাত মিনিট লাগবে, জয়চণ্ডী পাহাড়ের নিচে চলে আসুন। হাঁটতে হাঁটতে কিছু দূর যাওয়ার পরে পথ হারানো পথিক হয়ে গেলাম। ফোন করতেই বাইক নিয়ে মালিক হাজির। বাইকে ওঠার সময় বুঝতে না পারলেও, নামার সময় বুঝলাম বাইকে ব্রেক ছিল না। চালক বাইক শুধু পড়লেও কীভাবে আমি না পড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। পাহাড়ের চূড়ায় চণ্ডীমাতার মূর্তি, আর নীচে ঘুরতে আসা মানুষজনদের ঝুপড়িতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা। মাছের ঝোলভাত খেয়ে মনে হল খিদের চোটে একটু বেশি খেয়ে নিয়েছি। পাঁচশো তিনটে সিঁড়ি পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে ঘুরে আসি। উঠতে কষ্ট হলেও পাহাড়ের চূড়া থেকে চারপাশ দেখতে অসাধারণ।

পুরুলিয়ার অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু জয়চণ্ডী পাহাড়ের দিকে কখনও আসিনি। এসে যখন পড়েছি তখন চারপাশ ঘুরে বেড়াব ঠিক করলাম। একটা গাড়ির ব্যবস্থা করলাম। চালকের নাম তরণী। গাড়িতে ওঠার আগে তরণীবাবুকে একটা কথা বলেছিলাম, “আমার কোনও তাড়া নেই, যেখানে নিয়ে যাবেন সেখানে যাব। রাতে ঘোরাতে চাইলে রাতেও যেতে পারি।” শুনে স্বল্পভাষী তরণীবাবু হেসে উঠেছিলেন। বিষ্ণুপুরে যখন ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে অপেক্ষা করছি, তখন রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত লাইন বার বার মনের মধ্যে গুনগুন করে উঠছে, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে…”। কিন্তু তরণীবাবুর গাড়িতে উঠেই আমার ভীষণ প্রিয় গান শুনতে পাব সেটা আশা করিনি, “এক একেলা ইস শহের মে…”। সত্যিই তো পুরুলিয়ার জয়চণ্ডীতে একলা অপু ভবচণ্ডী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই একলা ঘোরার একটা আলাদা মজা আছে।

মাঠের ওপর দিয়ে, পিচের রাস্তা ধরে গাড়ি এগিয়ে চলেছে। গাড়িতে চালক আর তার পাশের সিটে আমি। একটা বাজারের কাছে রাস্তার ধারে ঠেলায় করে পেয়ারা বিক্রি করছে।
–তরণীবাবু, পেয়ারা খান?
–হ্যাঁ।
–গাড়িটা একটু দাঁড় করান। পেয়ারা কিনে আনি।
আশি টাকা কিলো পেয়ারা!
–এক কিলো নেব। কত দেব বলো?
–পঁচাত্তর পড়বে। তার কম হবে না।
–বেশ তাহলে এক কিলো দাও।
এক কিলোতে ন’টা পেয়ারা হলো তরণীবাবু। আপনি আমি দুজনে মিলে দুদিনে ন’টা পেয়ারা শেষ করতে পারব না? একগাল হেসে পেয়ারা খেতে খেতে তরণীবাবুর গাড়ি চলতে শুরু করে। গাড়ি এগিয়ে চলে পাঞ্চেত ড্যামের দিকে। দামোদর নামের সঙ্গে কেমন ছেলেবেলা জড়িয়ে আছে, সেই ‘ইকিড় মিকিড়…’ খেলার কথা মনে পড়ে যায়। পাঞ্চেত ড্যাম দামোদর নদের ওপর দেওয়া বাঁধ।

বাঁধের ওপর থেকে সিঁড়ি ধরে নদীর কাছে নেমে আসি। আমার পিছু পিছু নেমে আসে রোগা পাতলা একটি বাচ্চা ছেলে। হাতে ফুল রাখার ঝুড়ি।
–একটা লাও না।
–কি করব নিয়ে।
–ঘর সাজবে।
–না রে নেব না।
–লৌকায় যাবে।
–তুই যাবি?
–হ্যাঁ। দশ টাকা দিবে।
–দেব।
পাথরের ওপর দিয়ে খালি পায়ে ছুটে চলে যায়। মাঝিকে ডেকে নিয়ে আসে। মাঝি সম্পর্কে তার দাদু হয়। দাদুর মানায় সে নৌকোয় না চড়ে পরের সোয়ারির খোঁজে চলে যায়। রোদে পোড়া কালো সুঠাম দুই হাতে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় বৈঠা বাইতে লাগে। জল ঠেলে এগিয়ে যায় আমাদের নৌকো। মাঝ দামোদরে দাঁড় করিয়ে দেয় নৌকো। সূর্য ঢলে পড়ে নদীর বুকে। সূর্যের সোনালি আলোয় নদীর বুক চিকচিক করে ওঠে। মাঝি তার জীবিকার গল্প শোনায়, সূর্যোদয়ের আগে জাল আর বৈঠা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরতে।
–কী মাছ ওঠে?
–খয়রা, বাগদা আরও কত রকম। আমাদের এই ডাম্পের ওপারে মাছের আড়ত বসে তো। ওখানে লিয়ে যাই বিক্রি করি। আর বিকালে সওয়ারি লিয়ে ঘুরি।
–আমি এলে আমায় চিংড়ি বিক্রি করবে?
–হ। দাম বেশি দিলা তুমারে দিব।
–আমার তো এবারে আসা হবে না, পরের বার সকালের দিকে আসব।

সূর্যের সোনালি রেখা পেরিয়ে গাড়ি ছুটে চলে পঞ্চকোটের দিকে। পঞ্চকোটে ভেঙে পড়া রাজবাড়ি, টেরাকোটার রাধাকৃষ্ণ মন্দির আর জঙ্গল।

রাধা কৃষ্ণের মন্দির

জায়গাটা খুব সুন্দর। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু দোকান রয়েছে। সরকারি সাইনবোর্ডে গান লেখা রয়েছে, “কালো জলে কুচলা তলে ডুবলো সনাতন, আজ সারানা কাল সারানা পাই যে দরশন”। এমন একটা জায়গায় এইরকম একটা গানের চারটে লাইন কেন লেখা জিজ্ঞাসা করলাম স্থানীয় দোকানে, উত্তর যা পেলাম তা অসাধারণ।
–অনেকে এসে জিজ্ঞাসা করে, এটা কেন লিখা আছে। আমরা তো জানি না। যে লিখাছে গানটা সে বলতি পারবা।
ছ’টা বাচ্চা মেয়ে হাতে ফুল রাখার ঝুঁড়ি নিয়ে হাজির।
–একটা নাও। দশ টাকা দিবে।
–না নেব না।
–আমাদের তাইলে আইসক্রিম খাওয়াও।
আগে আমার সঙ্গে ঘোর। তারপরে খাওয়াব।
–সন্ধ্যা হই যাবে যে, বাড়ি ফিরবনি। এখুন খাইয়ে দিবা।
–বেশ চল।
ছ’জন আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়ি ফিরে যায়। আমি ‘মা কল্যাণেশ্বরী’র নাম করে বসে পড়লাম একটা খাটিয়ায়! নামটা শুনেই মন্দির মন্দির মনে হচ্ছে তো? তা কিন্তু নয়। এখানে দারুণ দিশি মুরগির ঝোল পাওয়া যায়। কুমড়োফুলের বড়া আর চা। দোকানের দেওয়ালে লেখা, “তুমি হারাতে পারো নতুন কারোর ডাকে”। সত্যি তো কোনো এক মায়ার হাতছানিতে হারিয়ে গেলাম, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম সকলের থেকে।

চারপাশ অন্ধকার। চাঁদের ফিকে আলো লাল মাটির মাঠ জুড়ে। জয়চণ্ডী পাহাড় যেন চাঁদের আলোয় নববিবাহিত কোনও বধূ। রাত আটটায় পৌঁছলাম যুব আবাসনে। বাইরে আলো জ্বললেও ভিতরে ছিল অন্ধকার। চার তলা বিল্ডিং-এর একতলায় দুটি রুম আর চার তলায় আমি ছাড়া কোনও রুমেই লোক ছিল না। একটা সময় মনে হয়েছিল এটা একটা ভূত বাংলো। চার তলায় সবকটি রুমেই তালা লাগানো একটা রুমে আমি একা। বারান্দায় টিমটিম করে জ্বলছে একটি আলো, সেই আলোর আভা পড়েছে পাহাড়ের গায়ে, আমি ভয়ে সেই পাহাড়ের বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে।
–দাদা রাতের খাবার লিয়ে এসেছি। আপনি লিচে চলে আসেন।
ব্রেকহীন বাইকের চালকের ফোন পেয়ে ইউথ হোস্টেলের নীচে নেমে আসি। খাওয়াদাওয়ার পরে মোবাইলের আলো জ্বেলে হাঁটতে বেরোলাম। আবাসন পেরোলেই ‘শ্রীমৎ সদানন্দ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রম। কোনও আশ্রমের প্রতি আমার কোনওদিন টান ছিল না। এই আশ্রমে একটি মন্দির আছে, শ্রীশ্রীগায়ত্রী মাতার মন্দির। দেবী দশ হাত পাঁচ মাথা নিয়ে পদ্মের ওপর দণ্ডায়মান, আর পাশে অনেকটা ‘ইটি’র মতো দুই অবতার। বর্তমান পরিচালক সাধু, “ইয়ে আশ্রম হামনে বানায়া। বহুত মেহনত লাগা। কুছ দক্ষিণা তো দেতে যাও”। এখন তো নেই সকালে এসে দেব।

তৃতীয় দিন
ভেবেছিলাম ভোরবেলায় উঠে হাঁটতে বেরোব। ভোর গড়িয়ে সকাল হয়ে গেল। সকালে খাওয়ার সন্ধানে হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা এগিয়ে গেলাম। সুন্দর ছিমছাম রিসর্ট, সঙ্গে রেস্টুরেন্ট।
–দাদা চা পাওয়া যাবে নাকি?
–হ হুবে। লুক আইসলে হুবে। একটু দেরি হুবে।
–পাখাটা চালিয়ে দেবেন।
–ওই পাখাটা চালাই দে।
একটু পরে লোক এলে ডিমের ওমলেট ও টোস্ট খেয়ে ফিরে আসি। সকাল সাড়ে ন’টায় রুম ছাড়তে হবে। আর দশটায় আমার পাইলট তরণীবাবু হাজির হয়ে যাবেন।

স্বল্পভাষী তরণীবাবু হাজির ঠিক দশটায়। জয়চণ্ডী পাহাড় পিছনে ফেলে গাড়ি এগিয়ে চলে। কাশবন পেরিয়ে সরু রাস্তা ধরে মাঠের মধ্য দিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমার জানা নেই। একটা দিঘির পাশে এসে দাঁড়ালাম। যোগমায়া সরোবর। এটাকেই আবার রঞ্জনডি ড্যামও বলে। চোখ জুড়িয়ে যাবে এই সরোবরে এলে। এই সরোবরের পাড়ে একটা গেস্ট হাউসও আছে। সরোবরের উল্টোদিকে জঙ্গল। জঙ্গলের শুরুতে কিছু শুকিয়ে যাওয়া গাছের প্রতিচ্ছবি জলের উপর। সাঁতরে ঘোরার ইচ্ছেকে দমন করে বেশ কিছুক্ষণ পায়ে হেঁটে ঘুরে আসি।

গাড়ি চলতে শুরু করে। তরণীবাবু ও আমি অবশিষ্ট পেয়ারায় কামড় বসাই। গাড়ি কাশীপুর মোড় পৌঁছয়। একটু ঘুরলেই কাশীপুর রাজবাড়ি। সিংহ দরজা খোলা থাকলেও লোহার গারদে ছিল তালা লাগানো। বছরে চারদিন আমাদের মতো সাধারণ প্রজাদের জন্যে রাজবাড়ির মধ্যে প্রবেশাধিকার থাকে। দুর্গাপুজোর চারটে দিন। দাঁড়িয়ে থাকি গারদের শিকগুলো ধরে। ফটকের পাশেই একটা অন্ধকার ঘর। সেই ঘরের ভেতর থেকে অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে আসছে। এখনও কি কেউ বন্দি! হাতের উপর ভর দিয়ে থামের পাশের চাতালে উঠে দাঁড়াই। চোখ রাখি অন্ধকার ঘরে জানালায়। কয়েক হাজার চামচিকের হোক কলরব ধ্বনি।

কাশীপুর রাজবাড়ি ছেড়ে গাড়ি এগিয়ে যায়। এই ঘোরাঘুরিতে পেয়ারা বেশিক্ষণ সঙ্গ দিল না। তরণীদা ও আমি দুপুরের ভোজন সেরে আবার চলতে শুরু করে দিই। গাড়ি কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে জানি না। অল্প সময়ের জন্য একটু চোখ লেগে গিয়েছিল। যখন তাকালাম পাহাড়েঘেরা আর এক দিঘির পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি। বড়ন্তি লেক। রোদের তেজ কমে এসেছে। হালকা সোনালি রেখা বড়ন্তির জলে চিকচিক করছে। একটু পরেই লেকের ওপর ঢলে পড়বে সূর্য। কাল আবার ফিরে যেতে হবে কলকাতায়। আবার হয়তো হারিয়ে যাব ‘নতুন কারোর ডাকে’। আবার হয়তো হারিয়ে যাব ‘নতুন কারোর ডাকে’।

শুভঙ্কর দে

 

 

Nila Banerjee

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 thoughts on “কবিতার মতো

  1. এতো কাছে থেকেও পুরুলিয়া যাওয়া হয় নি।ইচ্ছে উস্কে দিল এই লেখা।

  2. লিঙ্ক যখন পেয়ে গেলাম……পুরো টাই পড়বো।আশা করি…একদিন হার্ড কপি পাবো….যেখানে আছে…..পাতা উল্টে পড়ার সুখ।

  3. কবিতার মতো—যেন বেড়িয়ে এলাম ঐ জায়গা গুলোতে, দেখলাম দৃশ্যগুলি। উপভোগ্য লেখা।