পেশা

পেশা

মানসী গাঙ্গুলী

       অভাবের তাড়নায় যখন কিছুই প্রায় করার নেই অথচ কিছু না করতে পারলে দুবেলা-দুমুঠো জোটানো দায়, তখনই মিনার নিত্যযাত্রী বন্ধু রমা ওকে রোজগারের পথ দেখায়। রমাও সেই কাজই করে। জানত না মিনা আগে। তেমনি ও মিনাকে আশ্বাস দেয়, “আমি না বললে তুই যেমন জানতে পারিসনি আমি কী কাজ করি, তেমনি তুইও যে কী কাজ করিস তা কেউ জানতে পারবে না। আদর্শ ধুয়ে জল খেলে তো আর পেট ভরবে না! আমাদের এইটুকু বিদ্যে বুদ্ধি দিয়ে সংসার প্রতিপালন করার মত কী কাজই বা আমরা করতে পারি? আর এই যে এত মেয়ে রোজ যাতায়াত করছে, এদের অনেকেই এই কাজই করে। জানতে পারিস কি?” হাঁ হয়ে গেল মিনা রমার কথাগুলো শুনে। বলে কি রমা? পাঁপড় তৈরির কারখানায় কয়েক’শ টাকার কাজ করত মিনা অতটা রাস্তা ঠেঙিয়ে গিয়ে। কিন্তু সে পাঁপড় কারখানাও হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। পাওনা টাকা আদায় করতে রোজই প্রায় যেতে হয়, ধর্ণা দিতে হয় সেখানে। মান্থলিটা সবেই কেটেছিল, তাই যাতায়াতের খরচটা বিশেষ ছিল না। এমন সময়ই রমার এই প্রস্তাব। সাতপাঁচ ভেবে সামনে আর কোনও পথ খোলা না দেখে নিরুপায় মিনা অগত্যা রাজি হয় রমার প্রস্তাবে। মনের মধ্যে অনেক দ্বিধা, অনেক দ্বন্দ্ব। সৎভাবে বাঁচতে চেয়েছিল ও কিন্তু দায় ও দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় সততার সঙ্গে তার মোকাবিলা করা যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল ঠিক তখনই রমার কাছ থেকে এই কাজের প্রস্তাব আসে। টাকার হাতছানিটা অগ্রাহ্য করার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা তখন নয় ওর। পাঁচটা পেট চালানোর সঙ্গে তিনটি ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ জোগানো সহজ কথা নয়। দুটি বোন ও সবার ছোট ভাই, মিনার বড় আদরের ওরা। বাবা ক্যান্সারে ভুগে মারা যাওয়ায় সমস্ত সঞ্চয় তার পিছনেই চলে যায়। সবার বড় হওয়ায় এরপরে দায়িত্বটা যখন ওর কাঁধে এল, শেখর ওকে ক্রমাগত বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগল। মিনার পক্ষে তখন সম্ভব ছিল না সবাইকে দুর্দশার মধ্যে ফেলে রেখে নিজের সুখ খুঁজে নেওয়া। রাজি হয়নি তাই শেখরের প্রস্তাবে। শেখরকে বিয়ে করলে ও নিজে হয়তো সুখেই থাকতো কিন্তু প্রৌঢ়া, অসুস্থ মা আর তিন ভাইবোন! এদের কী হতো? না মিনা ঠিকই করেছে। অতটা অমানবিক হওয়া সম্ভব হয়নি ওর পক্ষে। ও তখন দিশেহারা। কিভাবে সংসারের সবার মুখে দুটো অন্ন তুলে দেবে, এই চিন্তা কুরেকুরে খাচ্ছে ওকে অহরহ। মিনা যখন কিছুতেই বিয়েতে রাজী হল না তখন শেখর বারবার ওর সঙ্গে দেখা করতে চাইত, একসঙ্গে সময় কাটাতে চাইত। মিনার মনের সে অবস্থা তখন ছিল না, তবু দু’একবার শেখরের জোরাজুরিতে দেখা করেছে বাধ্য হয়ে। সেই সুযোগে ওর সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হতেও চেয়েছে শেখর। মিনা রাজি হয়নি, বলেছে, “ওটা বিয়ের পরের জন্য তোলা থাক, অপেক্ষা কর ততদিন”। শেখর বলে, “বেশ আমি বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি আছি তবে বিয়ে যখন আমরা করবোই তখন আমাদের শারীরিক মিলনে বাধা কোথায়? অপেক্ষা করতে করতে আমাদের যৌবন পার হয়ে যাবে। যৌবনটাকে উপভোগ করতে আপত্তি কিসের?” মিনা প্রচন্ড রেগে যায় এতে। “ও তাহলে আমার দেহটাই তোমার বেশি প্রয়োজন?” এতে শেখর অপমানিত বোধ করে। দু’চার কথায় সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দেয়। একেই মিনা ঘরে বাইরে পরিস্থিতি সামাল দিতে নাজেহাল, তার ওপর শেখরের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততায় সে খুব ভেঙ্গে পড়ে। এদিকে পরীক্ষার ফিজ জমা দিতে না পারায় ভাইটা হয়তো পরীক্ষায় বসতেও পারবে না। মায়ের ওষুধ ফুরিয়েছে, ওষুধ কিনতে হবে। মা হাঁপানি রোগী, ওষুধের অভাবে খুব কষ্ট পাচ্ছে কদিন ধরে। টাকা চাই টাকা। কে দেবে? কী করা যায় এমতাবস্থায়, কিন্তু তাই বলে এই পথে পা বাড়াতে হবে স্বপ্নেও যে ভাবেনি সে। রমা পাশে থেকে ক্রমাগত ওর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করে গেছে।
          আর কোনো পথ খোলা নেই দেখে অগত্যা রমার দেখানো পথেই পা বাড়ায় মিনা। এ পথে যেতে অনেক ঝড় বয়ে গেছে ওর মনের ওপর দিয়ে। নিজের আদর্শ ধুয়ে-মুছে সতীপনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে সংসারটাকে সে সুখেই রাখতে পেরেছে। এই সংসারটাকে টেনে তুলতে সারাদিন অকথ্য পরিশ্রম করে ও। মা অসুস্থ, বোনেরা পড়াশোনা করে, তাই ভোরবেলা উঠে রান্না থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে তবেই বেরোয় বাড়ি থেকে। শুধু খেয়েপরে বাঁচা নয়, ভাই-বোনেদের পড়াশুনো, টিউশন সবকিছুই বেশ স্বচ্ছন্দে এগিয়েছে তরতর করে। প্রতিবেশীদের মধ্যে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ বারবার খুঁচিয়েছে মিনাকে, জানতে চেয়েছে কী করে সে? তার আয়ের উৎসটা কী? বাঁকা চোখে তাকিয়েছে তার দিকে। সেইসব তীর্যক চাহনিকে সন্তর্পণে এড়িয়ে চলতে হয়েছে ওকে। “যে যা ভাবে ভাবুক, যে যা বলে বলুক আমি তো পেরেছি আমার পরিবারটাকে সুখের মুখ দেখাতে। এটুকুই আমার শান্তি।” বস্তুত ওদের বাবা বেঁচে থাকতে খুব বিলাসিতায় না কাটালেও স্বচ্ছন্দেই থেকেছে ওরা, অভাব শব্দটার সঙ্গে পরিচয় ছিল না ওদের মোটে।
           ভাগ্যের পরিহাসে বাবার কাল রোগ ধরা পড়লে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বাবা বারবার বারণ করেছিলেন তার পিছনে সব সঞ্চয় শেষ করতে। “লিভারে ক্যান্সার, তুই আমায় বাঁচিয়ে রাখতে পারবি না রে মা, শুধু শুধু আমার পিছনে খরচ করিস না। আমাকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করা। টাকাগুলো রেখে দে। সব দায়-দায়িত্ব ফেলে চলে যেতে হবে আমায়। টাকাগুলো অন্ততঃ থাক, তোদের কাজে লাগবে।” অনেক কষ্টে কথাগুলো বলেছিলেন বাবা রমেশবাবু। বুকভরা বেদনা নিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। মিনা বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিল সেদিন, “মনখারাপ কোরো না বাবা, ছোট থেকে কত আদরে, যত্নে আমাদের বড় করেছ, আজ তুমি অসুস্থ হয়ে কষ্ট পাচ্ছো আর টাকা খরচ হবে বলে তোমার চিকিৎসা করাব না? তুমি চিন্তা কোরো না বাবা, আমার ওপর ভরসা রাখো, আমি আছি তো।” বাবা মিনার হাত দুটো ধরে ঝরঝর করে কেঁদেছিলেন, দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন ওকে। বলেছিলেন, “ভালো থাকিস, সবাইকে ভালো রাখিস।” মিনা জানতো বাবাকে বেশিদিন বাঁচানো সম্ভব নয়, তবু যতদিন থাকেন, বাবা বলে ডাকলেও যে মনে হয় বড় ভরসাস্থল। সেই ভরসাস্থলটিকে যতদিন যত্নে বাঁচিয়ে রাখা যায়। কথায় বলে যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। মিনা বিশ্বাস করে সে কথা। অতীব যত্নে হিসাব করে খাইয়ে দাইয়ে রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে এরপরে বাবাকে তিনবছর বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিল মিনা কিন্তু ততদিনে সব সঞ্চয় শেষ। এরপর বাঁচলে শেষ পর্যন্ত সেই চিকিৎসার অভাবেই হয়তো মরতে হতো তাঁকে।
         ট্রেনে করে যাওয়ার সময় বাবার কথাগুলো বড্ড মনে পড়ছিল মিনার। চোখ বুজে মাথাটা হেলিয়ে এইসব ভাবছিল ও। দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল জলের ধারা। রমা বসেছিল উল্টো সিটে। ওকে ঝাঁকুনি দেয় সে। আশপাশে অনেক মানুষ, নিজেকে সংযত করতে বলে চোখের ইশারায়। কিছু পরে হাওড়া স্টেশন এলেই নেমে পড়ে ওরা। টয়লেটে গিয়ে সাজগোজ করে নেয় ব্যাগে রাখা আইলাইনার, লিপস্টিক মেখে। পাউডারের পাফটাও বুলিয়ে নেয় একবার মুখে। কিছু কুঁচো চুল টেনে এনে মুখের ওপর ফেলে যাতে একটু মোহময়ী লাগে। বাড়ি থেকে সাদামাটা হয়েই বেরোয় ওরা কৌতুহলী প্রতিবেশীদের দৃষ্টি এড়াতে। আবার ফেরার সময়ও এইভাবেই সব সাজ তুলে বাড়ি ফেরে। আন্দাজ সবাই করতে পারে হয়তো, কারণ একটা অর্ধশিক্ষিত মেয়ে কী এমন করে যাতে তাদের সংসারটা এতটা সুষ্ঠভাবে চলতে পারে! তবুও ওদের চালচলন দেখে মুখের ওপর কেউ কিছু বলতে পারে না। মা কী বোঝেন কে জানে! কেবল মেয়ের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। নিজের ওষুধ ফুরিয়ে গেলেও বলতে চান না মেয়েকে। তাঁদের অক্ষমতাকে ঢাকবার চেষ্টা করে চলেছে মেয়ে, এ তাঁকে বড্ড পীড়া দেয়। কিন্তু মিনার ঠিক খেয়াল থাকে। মায়ের ওষুধ শেষ হবার আগেই এনে হাজির করে। তবু দৈবাৎ কোনোদিন বাড়ি থেকে না বেরোলে সেইসময় ওষুধ ফুরিয়ে গেলে চুপ করে থাকেন মা। মায়ের গলার স্বর শুনে বুঝে যায় মিনা যে ওষুধ ফুরিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ছোটে দোকানে ওষুধ আনতে।
           রোজ কত মানুষের লোলুপ দৃষ্টি চেটেপুটে খায় ওর দেহটাকে। দিনের পর দিন অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে হয় দেহটাকে, এমনকি মাসের ওই বিশেষ চারটি দিনেও ওর নিষ্কৃতি নেই। তাই একটু ভালো খাওয়াদাওয়ার চেষ্টা করে মিনা। মনে মনে ভাবে, “দেহটাকেও তো সুন্দর রাখতে হবে, আকর্ষণীয় করে রাখতে হবে, তবেই তো এই বাজারে দর বাড়বে”। বাবার আশীর্বাদের কথা মনে পড়ে। বাবা “ভাল থাকিস, ভালো রাখিস সবাইকে” বলেছিলেন। ভাল হয়ত সবাইকে রেখেছে ও, নিজে কী ভাল থাকতে পেরেছে? নিজের ওপর ঘেন্না হয় ওর, বাড়ি ফিরে রোজ বালতি বালতি জল ঢেলে ধুয়ে ফেলতে চায় শরীরের যত ময়লা। কিন্তু মনের ক্লেদ, গ্লানি তা যে ধোওয়া যায় না। তাই অহরহ তা পীড়া দেয় ওকে। কেবল যখন দেখে ভাইবোনেরা ভাল আছে, তারা মন দিয়ে পড়াশোনা করছে, তখন মনটা ভরে ওঠে ওর, সব পাপ ধুয়ে মুছে যায় নিমেষে। ভাইটি হয়েছে পড়াশোনায় খুব ভাল। ক্লাসে ফার্স্ট হয় প্রতিবছর। এরপর মাধ্যমিকে ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে জেলার মধ্যে ফার্স্ট হলে আনন্দে দিদিকে জড়িয়ে ধরে সে। “বড়দিদি, তোমার জন্যই এটা সম্ভব হল” বলে যখন, মিনার দুচোখ দিয়ে ধারা বয়ে যায়। সামনে উচ্চমাধ্যমিক। মিনার স্বপ্ন ওকে ডাক্তার করবে। সে স্বপ্ন ভাইয়ের চোখে এঁকে দিতেও সমর্থ হয়েছে ও। বোনেদেরও জাগিয়ে তুলেছে। লেখাপড়া শিখে তা যেন কাজে লাগাতে পারে। ও চায়, “সবাই স্বনির্ভর হোক, যাতে কোনও অর্থকষ্ট ওদের কখনও ছুঁতে না পারে। যাতে অর্থের জন্য ওদের কখনও বিপথগামী হতে না হয়। যা আমার ওপর দিয়ে হয়েছে বা হচ্ছে, আমাকে দিয়েই যেন তার সমাপ্তি হয়।”
         মিনার এখন আর গ্লানি হয় না। ভাবে, “আমার যা আছে সেটাই আমার মূলধন। সেটা ভাঙিয়ে খেতে দোষ কী?” দেখতে দেখতে তিনটি বছর পার। এখন তার মানসিক অবস্থা রমারই মত। যেন কিছুতেই কিছু এসে যায় না। চলছে সবই আগের মতো। মেজোবোনটা নার্সিং পাশ করেছে, ছোটটা বিএড পড়ছে। ভাই তার স্বপ্ন পূরণ করেছে। ডাক্তারি পড়ছে সে। দ্বিতীয় বর্ষ। মা-ও উপযুক্ত চিকিৎসায় ভালো আছেন। সকলে যখন সুখে-স্বচ্ছন্দে, মিনার জীবনে নেমে এল মনখারাপের তীব্র  অন্ধকার। কাজে বেরিয়েছিল যেমন বেরোয় রোজ। কিন্তু পড়তে হল তাকে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিতে অনেক অবাঞ্ছিত প্রশ্নের মুখোমুখি। আজ তার সঙ্গ পেতে তার ঘরে ঢুকল শেখর। চমকে উঠল দুজনেই দুজনকে দেখে। “ও, তাহলে এই ব্যাপার! এইজন্য তুমি সেদিন আমায় বিয়ে করে আমার সঙ্গে সংসার পাততে রাজি হওনি? নিত্যনতুন নাগর পাবার নেশায় মেতেছিলে? ভালোই হয়েছে, এমন নোংরা চরিত্রের মেয়েকে ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে হয়নি”, তীব্র শ্লেষের সঙ্গে কথাগুলো বলল শেখর। অপমানে মিনার কান দুটো লাল হয়ে গেছে, রাগে সারাশরীর তার থরথর করে কাঁপছে। বলে, “ভালই হয়েছে যে আমি সেদিন রাজি হইনি, নাহলে এমন লম্পট স্বামীর ঘর করতে হতো, ঘরে বউকে রেখে যার বাইরের মেয়েমানুষ প্রয়োজন হয়।” “হ্যাঁ হয়, আর সেইজন্যই আমি এখানে এসেছি আর মেয়েমানুষের জন্য পয়সাও খরচ করেছি। সেদিন বিয়ে করে আমার সঙ্গে বিছানায় শোওনি আজ বেশ্যা হয়ে আমার সঙ্গে শুতে হচ্ছে তোমাকে।” “কক্ষনো না, বেরিয়ে যাও আমার ঘর থেকে। তোমার সঙ্গে শুতে আমার বয়েই গেছে”, মিনা চিৎকার করে বলে। “তা বৈকি! এতগুলো টাকা গুনে মাসির কাছে দিয়ে এসেছি, যাও বললেই আমি যাচ্ছি আর কী।” “আমি কিছুতেই তোমায় সঙ্গ দেবো না, তোমার সঙ্গে শোবো না। তুমি যদি না যাও তো আমিই ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি।” মিনা বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলে শেখর খপ করে ওর হাত চেপে ধরে। তারপর জোর করে টেনে ওকে বিছানায় ফেলে বিবস্ত্র করে দেয়। মিনা প্রানপণে বাধা দেবার চেষ্টা করে কিন্তু সক্ষম হয় না। শেখর সেইসময় বলে, “বাড়িতে সবাই জানে তো কী কাজ করো তুমি? আর তোমার আদরের ভাই? ডাক্তারি পড়ছে তো সে, জানে তো দিদি তার কী কাজ করে? তাকে গিয়ে বলি তার দিদির চাকরির কথা? ও না, চাকরি নয় পেশা।” বলে হো হো করে হেসে ওঠে শেখর। মিনা আঁতকে ওঠে, “বলে কী শেখর? আমার দেহের বিনিময়ে কেনা সুখের সংসারকে তছনছ করে দেবে ও? সে তো আমাদের সব খবরই রাখে দেখছি।” শেখরের মুখটা চেপে ধরে মিনা, “দোহাই তোমার এসব তুমি ওদের বোলো না। তিল তিল করে নিজেকে ধ্বংস করেছি ওদের সুখ কিনে দিতে, তুমি সব ছারখার করে দিও না”। শেখর জয়ের হাসি হাসে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে। এরপর শেখরকে সে আর বাধা দেয় না। শেখর ওর গালে টোকা মেরে বলে, “এই তো লক্ষী মেয়ে”। এরপর প্রায়ই শেখরের আনাগোনা শুরু হল সেই বেশ্যাপল্লীতে।  সে অন্য কোনো ঘরে অন্য কারও কাছে যায় না, সে আসে কেবল মিনার কাছে। মিনা আর বাধা দেয় না। কেবল শেখর যখন ওর দেহটাকে ভোগ করে, ওর চোখ দিয়ে বয়ে যায় নোনা জলের ধারা।
মানসী গাঙ্গুলী
পুকুরঘাট

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *