সমর্পিতা ঘটকের দুটি কবিতা
সমর্পিতা ঘটক
অন্য মেয়ে নিশ্চিন্ত মনে জামা মেলছে মেয়েটা এক কাঁধ উঁচু করে কানে ধরে আছে ফোন, হয়তো মায়ের সঙ্গে চলছে কথা... নতুন শাঁখা-পলা, লাল টিশার্ট, গোলাপি কেপ্রি উদ্বেগহীন লক্ষ্মীমন্ত ছায়া... ভয় নেই পিছলে যাওয়ার... শান্ত মুদ্রায় অঙ্গীকারের মতো দড়ির ওপর টাঙিয়ে দিচ্ছে একটা নাইটি, বারমুডা, বালিশের ওয়াড় লাল ক্লিপ, হলুদ ক্লিপ, পরপর তোয়ালে, চাদর... হয়তো ফেসবুক করবে কিংবা দেখবে সিরিজ বেলা গড়িয়ে এলে, দই আর বেসন দিয়ে ঘষে নেবে মুখ তারপর স্নান, খাওয়া, নির্জন নির্ভার একান্ত দুপুর... পরবে নেলপলিশ, করবে নেল আর্ট বর বলবে, ‘দারুণ হয়েছে... এসব করলে আজ?’ আমি যেন অন্য পারে... তাড়িয়ে মারে অন্তরভার এঘর, ওঘর বেশ জটিল... নিরীহ দুপুর অপ্রসন্ন শব্দ খুঁড়ি আর ভাঙি, ফাটলপথ বেঁকে যায় নদীর মতো শিকড় পর্যন্ত পৌঁছতে কয়েকশো ডুব, অজস্র ঢেউ মন্থন সাড়া পথ জুড়ে... কেবল হাত-পা ছোঁড়া... জল ঠেলে ঠেলে ক্লান্ত আমি বেহদ্দ নুলিয়া... রেসকিউ-বোটের আশায় প্রহর গুনছি দিনরাত। ----------------------------------- বাবুল মোরা নৈহার ছুটো হি যায় মুঙ্গফলির খোসার মতোই বিকেলগুলো উড়ে গেল ঝোড়ো হাওয়ায় মোটা খোসার গায়ে ভুসিকালি জরুলদাগ যেন প্রত্নছাপ! বিহারি বৌয়ের হাতের উল্কি ওরকমই আছে স্মৃতি, আছে মায়া, অথচ এলোমেলো... সবুজ চুড়ির ফাঁকে উঁকি দেয় প্রিয়নাম, লতাপাতাফুল, ত্রিশূল, অঙ্গন, গাঁও, পিপল কে ছাঁও, শিবশম্ভুজীর মন্দির... মেয়েরা সবকিছু জড়িয়েমড়িয়ে... ফেলবে না মকাইয়ের এক ভি দানা বয়ে চলে পিঁপড়ের মতো এই ঘর, ওহ মহল্লা, খেত-খলিয়ান এই বুঝি হারাল! ভয় বিড়ালের মতো বুক ঘেঁষে... ‘বাবুল মোরা নৈহার ছুটো হি যায়’, এই তো জীবনকাব্য... ঔরতনেহি লিখি হোগি ইয়ে গানা, না দিদি!’ না গো, ওই যে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ! বলা হয়ে ওঠে না... ঠাঁইনাড়া নবাব ভেসে চলেছেন আজও... সন্ধ্যার গঙ্গায় খেয়া-বিন্দু আলো স্থবির করে দেয় লক্ষ্ণৌ, পাটনা, কলকাতা, কানপুর ‘মায়কে, শ্বশুরাল, ইয়ে কলকাত্তা শহর... ফির... কতবার ছেড়ে ছেড়ে আসা যায়?’ বাদামওলার বউ ঠোঙায় ঠোঙায় কাগজে মোড়া নুন ভরে দেয়...সমর্পিতা ঘটক
কবিতা দুটো অসাধারণ লাগলো। বিশেষ করে দ্বিতীয়টা। বুকে যেন মোচড় দিয়ে উঠল। নৈহার ছুটেই গেছে সেই কবে!
দুর্দান্ত!